August 2016 - Read Your Solution Of IT

You can learn Graphics right HERE

ad

Hot

Post Top Ad

Tuesday, August 30, 2016

ফটো দেখুন

মানবহত্যা ও সন্ত্রাসবাদ ইসলামের পথ নয়

1:28 AM 0

মানবহত্যা ও সন্ত্রাসবাদ ইসলামের পথ নয়

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ
অলংকরণ: তুলিইসলামের মূল কথা হলো তওহিদ বা একত্ববাদ; এর বিপরীত হলো শিরক বা অংশীবাদ, যা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না বলে ঘোষণা করেছেন। শিরকের পরই সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হলো মানবহত্যা। এটি বান্দার হক হওয়ায় আল্লাহ মানবহত্যাকারীকে ক্ষমা করবেন না।
আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-এর দ্বিতীয় পুত্র কাবিল প্রথম আপন বড় ভাই হজরত হাবিল (রা.)-কে অন্যায়ভাবে হত্যা করেন। প্রসঙ্গটি কোরআন মজিদে এভাবে এসেছে—‘আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শোনাও। যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো এবং অন্যজনের কবুল হলো না। সে বলল, “আমি তোমাকে হত্যা করবই”। অপরজন বলল, “অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন। আমাকে হত্যা করার জন্য তুমি হাত তুললেও তোমাকে হত্যা করার জন্য আমি হাত তুলব না; আমি তো জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। তুমি আমার ও তোমার পাপের ভার বহন করো এবং অগ্নিবাসী হও ইহাই আমি চাই এবং ইহা জালিমদের কর্মফল।” অতঃপর তার চিত্ত ভ্রাতৃহত্যায় তাকে উত্তেজিত করল। ফলে সে তাকে হত্যা করল; তাই সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হলো।’ (সুরা-৫ মায়িদাহ, আয়াত: ২৭-৩১)।
মানবহত্যা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এ কারণেই বনি ইসরাইলের প্রতি এই বিধান দিলাম যে কারণ ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল, আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। তাদের কাছে তো আমার রাসুলগণ স্পষ্ট প্রমাণ এনেছিলেন, কিন্তু এরপরও তাদের অনেকে দুনিয়ায় সীমা লঙ্ঘনকারীই রয়ে গেল।’
ইসলামের শিক্ষা হলো: সব মানুষ এক আল্লাহর বান্দা; যারা বিশ্বাসী তারা আল্লাহর অনুগত বান্দা। সব মানুষ একই বাবা-মায়ের সন্তান; সব মানুষ একই রক্তে-মাংসে গড়া; তাই সাদা-কালোতে কোনো প্রভেদ নেই। সব মানুষ আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত। কলেমা পড়া মুসলমান সবাই সমান; কবরে ও হাশরে সবাইকে একই প্রশ্ন করা হবে।
ইসলামে মানবহত্যার পরকালীন বিধান
মানবহত্যার পরকালীন বিধান সম্বন্ধে কোরআনে বলা হয়েছে: ‘কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মোমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে লানত করবেন এবং তার জন্য মহা শাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৯৩)। আরও সতর্ক করে বলা হয়েছে: ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা করবে না।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৫১)। ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা কোরো না! কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি উহা প্রতিকারের অধিকার দিয়েছি; কিন্তু হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে; সে তো সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছে।’ (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৩)।
ইসলামি শরিয়তের প্রধান উদ্দেশ্য ও
ইসলামের শিক্ষা
ইসলামি শরিয়তের প্রধান উদ্দেশ্য হলো: জীবন রক্ষা, সম্পদ রক্ষা, সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা, জ্ঞান রক্ষা, বংশ রক্ষা ও ধর্ম রক্ষা। এখানে প্রণিধানযোগ্য যে, শরিয়তের মূল পাঁচটি লক্ষ্যের প্রধান লক্ষ্য হলো জীবন রক্ষা। আজকাল অনেকেই সামান্য খুঁটিনাটি কারণে সন্ত্রাস, হত্যা, গুপ্তহত্যাসহ খুনখারাবি করতে দ্বিধাবোধ করে না। এটা ইসলামের শিক্ষা নয়; ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কেউ যদি এমন কোনো অপরাধও করেন, যাতে তার প্রাণ নিধনের বিধান আছে; তবে তা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কর্তৃক বাস্তবায়ন করা ইসলামসম্মত নয়; বরং তা যথাযথ আদালত ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও কেবল বাস্তবায়নের এখতিয়ার রাখে। কারণ, কোরআন-হাদিসে বর্ণিত বিধিবিধান যা অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত, অর্থাৎ ব্যক্তির একান্ত নিজের নয়; তথা সমাজ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তা কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায় কর্তৃক নিজেদের মতো করে বাস্তবায়ন করা শরিয়তসিদ্ধ নয়; এটি কেবল আদালত ও সরকারের দায়িত্ব।
ইসলাম ন্যায়পরায়নতা, সুবিচার ও সুন্দর আচরণ করার শিক্ষা দেয়। ইসলাম বিশ্বব্যাপী মানবভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে যুদ্ধ সংঘটনের কারণ দূর করতে চায়। ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, শিল্প, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মানবভ্রাতৃত্বের নীতিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার মধ্যে সহযোগিতামূলক সুসম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হলে যুদ্ধের আশঙ্কা কমে যায়। মানবভ্রাতৃত্বের পাশাপাশি ইসলাম বিশ্বাসের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চায়। হিজরতের সময় পথ দেখানোর জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কার মুশরিক আবদুল্লাহ ইবনে আরিকতের সাহায্য নিয়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইহুদিদের সাহায্যও নিয়েছেন, ছওয়ান ইবনে উমাইয়া মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গী ও সমর্থক হয়েছেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) পরম শত্রুর সঙ্গেও ভালো আচরণ করেছেন। এ ছাড়া তিনি অমুসলিমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলতেন। তিনি তাদের সঙ্গে লেনদেন করেছেন এবং শ্রমের বিনিময়ও করেছেন। পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করা ইসলামসমর্থিত নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন সে প্রস্থান করে, তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্যক্ষেত্র ও জীবজন্তু নিপাতের চেষ্টা করে। আর আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২০৫)। মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় ঘটিয়ো না, তাঁকে ভয় ও আশার সহিত ডাকবে। নিশ্চয় আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৬)। ইমাম ইবনে কাসির (রা.) বলেন, যেসব কর্মকাণ্ড পৃথিবীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তা করতে আল্লাহ তাআলা নিষেধ করেছেন। কোরআন করিমে রয়েছে, ‘পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি কোরো না।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১১)।
ইসলাম সর্বোচ্চ নৈতিকতা, উন্নত মূল্যবোধ, চরম ধৈর্য ও পরম সহিষ্ণুতা প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়। ইসলাম অতর্কিতভাবে কারও ওপর আক্রমণ চালানোর অনুমতি দেয় না।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com


https://web.facebook.com/yousuf7181/ 
Read More

খুতবার সুন্নত ও প্রাসঙ্গিক কথা

1:26 AM 0

খুতবার সুন্নত ও প্রাসঙ্গিক কথা

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ
.খুতবা কী ও কেন?
খুতবা আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো ভাষণ: বক্তৃতা, প্রস্তাবনা, ঘোষণা, সম্বোধন, উপস্থাপনা ইত্যাদি। খুতবা হলো জুমার নামাজের আগে, উভয় ঈদের নামাজের পরে, হজে আরাফার দিনে মসজিদে নামিরাতে, বিয়ের অনুষ্ঠানে ও বিভিন্ন ইসলামি অনুষ্ঠানে খলিফার প্রতিনিধি, দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা ইমাম ও খতিব কর্তৃক প্রদত্ত প্রাসঙ্গিক বক্তৃতা বা ভাষণ। যিনি খুতবা দেন তাঁকে ‘খতিব’ বলা হয়। সাধারণত যেসব মসজিদে আলাদা খতিব নেই, সেখানে পেশ-ইমাম বা প্রধান ইমাম অথবা ইমাম ও সানি ইমাম (সহকারী ইমাম) খুতবা প্রদান করেন এবং জুমার ও ঈদের নামাজে নেতৃত্ব দেন। জুমার খুতবা নামাজের আগে এবং ঈদের নামাজসহ অন্যান্য নামাজে খুতবা পরে দেওয়া হয়। ঈদ ও জুমার খুতবা ওয়াজিব, অন্যান্য খুতবা সুন্নত।
খুতবার মধ্যে যেসব বিষয় থাকা সুন্নত
হামদ (আল্লাহর প্রশংসা) দ্বারা শুরু করা, ছানাখানি (গুণগান) করা, শাহাদাতাঈন (তওহিদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য) পাঠ করা, দরুদ শরিফ পড়া, কোরআনে করিমের প্রাসঙ্গিক আয়াত তিলাওয়াত করা, সংশ্লিষ্ট হাদিস পাঠ করা, প্রয়োজনীয় মাসআলা বর্ণনা করা, ওয়াজ-নসিহত বয়ান করা, উপদেশ দেওয়া, সৎকর্মে উদ্বুদ্ধকরণ ও মন্দ কাজ থেকে নিরুৎসাহিত করা, মুসলমানদের জন্য দোয়া করা।            
খতিবের করণীয় সুন্নত
অজু অবস্থায় থাকা (পবিত্র থাকা)। জুমার খুতবার প্রারম্ভে (মিম্বারে) বসা। সব খুতবা দাঁড়িয়ে দেওয়া। জুমার খুতবা মিম্বারে দাঁড়িয়ে দেওয়া। মুসল্লিদের (শ্রোতা-দর্শকদের) দিকে ফিরে খুতবা দেওয়া। খুতবা আরম্ভের আগে মনে মনে ‘আউজুবিল্লাহ’ ও ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া। খুতবা আরবি ভাষায় হওয়া। সশব্দে (শ্রোতা-দর্শক শুনতে পায় এমনভাবে) খুতবা পরিবেশন করা। উভয় খুতবা সংক্ষিপ্ত হওয়া। উভয় খুতবা (প্রতিটি) ‘তিওয়ালে মুফাছ্ছল’ (সুরা হুজুরাত থেকে সুরা বুরুজ পর্যন্ত) সুরার চেয়ে দীর্ঘ না হওয়া। দুই খুতবার মাঝে বসা। ঈদের খুতবায় প্রারম্ভে না বসা। ঈদের প্রথম খুতবার শুরুতে ৯ বার; ঈদের দ্বিতীয় খুতবার শুরুতে ৭ বার এবং শেষে ১৪ বার তাকবির বলা।
খুতবায় যা যা থাকা উচিত
পূর্বসূত্র (বিগত আলোচনার সারাংশ ও আজকের বিষয়ের সঙ্গে পূর্বাপর সম্পর্ক)। আজকের বিষয়: প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা। গত সপ্তাহের স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি পর্যালোচনা। আগামী সপ্তাহের করণীয় আমল আলোচনা। (চাঁদের মাসের আমল)। সমকালীন প্রসঙ্গ ও দিকনির্দেশনা। মধ্যপন্থা অবলম্বন। ঐক্যের প্রচেষ্টা ও অনৈক্য দূর করা।
মিম্বার প্রসঙ্গ
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথমত একটি খেজুরগাছের খুঁটির সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। মিম্বার তৈরি হওয়ার পর তিনি তার ওপর দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। ওই মিম্বারে তিনটি তাক ছিল। নবীজি (সা.) তৃতীয় তাকে দাঁড়াতেন ও বসতেন। নবীজি (সা.)-এর ওফাতের পর হজরত আবু বকর (রা.)-এর খিলাফতের সময় তিনি দ্বিতীয় তাকে দাঁড়াতেন। হজরত ওমর (রা.)-এর খিলাফতের সময় তিনি তৃতীয় তাকে দাঁড়াতেন। অতঃপর হজরত উসমান (রা.)-এর খিলাফতের সময় তিনি দ্বিতীয় তাকে দাঁড়াতেন এবং এ প্রথাই বর্তমানে প্রচলিত। তবে প্রয়োজনে মিম্বারের তাকের সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে এবং সুবিধানুযায়ী খতিব যেকোনো তাকে দাঁড়াতে পারেন।             
খতিবের ‘আসা’ বা যষ্টি প্রসঙ্গ
রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম (রা.) সাধারণত তৎকালীন সামাজিক পরিবেশের প্রয়োজনে ‘আসা’ বা যষ্টি বহন করতেন। চলাফেরার সুবিধার জন্য অনেকে এখনো তা সহায়করূপে ব্যবহার করেন। আসলে যষ্টি বা লাঠি একটি প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক বস্তু। যাঁরা এটি ব্যবহার করেন, তাঁরা দাঁড়ালে সাধারণত তা হাতেই রাখেন এবং বিভিন্নভাবে এর ওপর হেলান, ঠেস বা ভর দিয়ে থাকেন। পবিত্র কোরআনে হজরত সুলাইমান (আ.)-এর লাঠির বিবরণ বিবৃত হয়েছে এবং হজরত মুসা (আ.)-এর লাঠির কথা আলোচিত হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)ও যেহেতু লাঠি ব্যবহার করেছেন, তাই অনেকে খুতবা দেওয়ার সময় হাতে যষ্টি ধারণ সুন্নত ও উত্তম মনে করেন। আবার অনেক ফকিহর মতে, এটি জীবনের প্রয়োজনীয় উপকরণ; তাই শুধু খুতবার সঙ্গে সুনির্দিষ্ট নয়
খতিবের কতিপয় গুণাবলি
মোত্তাকি (তাকওয়া), মুখলিস (ইখলাস), আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল (তাওয়াক্কুল), বিজ্ঞ আলেম, ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু, কপটতামুক্ত, সরলমনা, বিনয়ী, সুমিষ্টভাষী, ভদ্র। এ ছাড়া খতিবের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স, অবয়ব (সুরত), আখলাক (সিরত), পোশাক-আশাক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ।
খতিবের করণীয়
বয়ানের আগে প্রস্তুতি গ্রহণ অপরিহার্য। শ্রোতার মনোযোগের প্রতি লক্ষ রাখা। সুন্দরভাবে সূচনা করা। দর্শক-শ্রোতার বিরক্তি উদ্রেক করে এমন আলোচনা পরিহার করা। দর্শক-শ্রোতার ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধি বিবেচনা করে কথা বলা। সমস্যা নির্ণয় করে সে অনুযায়ী সমাধানের পথ দেখানো। বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে ক্রমানুসারে উপস্থাপন করা। কোনো বিষয়ে সরাসরি কাউকে আক্রমণ বা ইঙ্গিত করে না বলা। দোষের বিষয়গুলো নিজেকে দিয়ে উদাহরণ দেওয়া। সঠিক বক্তব্য প্রদান করা। পরিণতি চিন্তা করে কথা বলা। সব বিষয়ে মতামত না দেওয়া। তাৎক্ষণিক মন্তব্য না করা। জানার সবটুকু না বলে শুধু প্রয়োজনীয় কথাটুকু বলা। হেকমতের সঙ্গে কথা বলা। সম্বোধনের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনা। অতি দ্রুত তালে বা অতি ধীর লয়ে কথা না বলা। গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো প্রয়োজনে দুবার, তিনবার করে বলা। মনে রাখতে হবে, এতে যেন শ্রোতার ধৈর্যচ্যুতি না ঘটে। আয়াত ও হাদিস উল্লেখ করে বয়ানের গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা আনয়ন করা। আকর্ষণীয় সহিহ কাহিনি দ্বারা শ্রোতার মনোযোগ ধরে রাখা। শায়ের-আশআর, কবিতা ও প্রবাদবাক্য দ্বারা শ্রীবৃদ্ধি করা। উদাহরণ দিয়ে বিষয়কে বোধগম্য করা। উদ্ধৃতি যেন নির্ভুল হয় তা লক্ষ রাখা। শব্দ, বাক্য ও উচ্চারণ যেন শুদ্ধ হয় তা খেয়াল রাখা। নিজের কথায় ও কাজে যেন মিল থাকে সেদিকে যত্নবান থাকা। ইতিবাচক কথা ও আশার বাণী শোনানো। সুন্দরভাবে শেষ করা।
আলোচনার বিন্যাস যেমন হতে পারে
আমলি কথা, ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত বিষয়াবলি, প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক মাসআলা, নবী-কাহিনি, আউলিয়া-কাহিনি, একটি ফরজ আমল, একটি হারাম কাজ, একটি কবিরা গুনাহ, একটি আরবি (সুরা ও দোয়ার) শব্দার্থ, একটি আয়াত বা ছোট সুরা মাশক, প্রশ্নোত্তর (সম্ভব হলে)।
খুতবায় যা যা থাকা উচিত নয়
দলীয় রাজনৈতিক আলোচনা। বিতর্কিত মাসআলা মাসায়িল। অপ্রয়োজনীয় অভিনব বিষয়। মুসল্লিদের মধ্যে অনৈক্য, বিভেদ ও ভুল–বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনো বিষয়।         
খুতবার বিষয় নির্ধারণ
খুতবা হলো ব্যবহারিক নির্দেশনা। তাই এর সঙ্গে সভ্যতা সংস্কৃতি, ঋতুবৈচিত্র্য ও আবহাওয়া বা জলবায়ু এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশের প্রতিফলন থাকবে। একজন সচেতন প্রজ্ঞাবান আলেম ও খতিব তাঁর মেধা ও মননশীলতা প্রয়োগ করে খুতবার বিষয় নির্ধারণ করবেন। স্বাভাবিকভাবেই এতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের বিষয় আলোচনায় থাকবে; থাকবে এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ কোরআন ও হাদিসের আলোকে; থাকবে এর থেকে পরিত্রাণের দিকনির্দেশনা।             
খুতবার বিভিন্নতা ও অভিন্নতা
খুতবার স্থানীয় বিষয়গুলো বিভিন্ন হলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো হবে প্রায় অভিন্ন। খুতবার বিষয় নির্ধারণ ও শব্দচয়ন দায়িত্বশীল খতিবের নিজস্ব এখতিয়ার। তবে কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা বা বিজ্ঞজনের কল্যাণমূলক সুপরামর্শ বা সদুপদেশ গ্রহণ করাতে কোনো দোষ নেই।     
খুতবা-বিষয়ক কেন্দ্রীয় করণীয়
খুতবা একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর সঙ্গে দেশ, জাতি ও জনগণের বিষয়াবলির সম্পর্ক সুনিবিড়। কিন্তু সব খতিব সব বিষয়ে সমানভাবে পারদর্শী নন এবং সমকালীন গুরুত্ব অনুধাবন করে বিষয় নির্বাচন ও উপস্থাপন সবার পক্ষে সম্ভবও নয়। তাই বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের প্রাক্-‘খুতবা বয়ান’ আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়মিত প্রতি বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। প্রতি বুধবার এই খুতবা নিয়ে একটি সাপ্তাহিক প্রকাশনা বের করা যায় এবং খুতবার এসব বিষয় তিন লক্ষাধিক মসজিদের ইমাম ও খতিবদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা যায়। এসব উদ্যোগ নেওয়া গেলে সব মানুষ খুতবা দ্বারা সমভাবে উপকৃত হতে পারবে।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি। সহকারী অধ্যাপক, আহ্‌ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।

Read More

হজ ও ওমরাহ পরিচিতি ও বিধান

1:23 AM 0

হজ ও ওমরাহ পরিচিতি ও বিধান

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ

হজ
হজ আরবি শব্দ। হজের আভিধানিক অর্থ হলো ইচ্ছা করা এবং সফর বা ভ্রমণ করা। ইসলামি পরিভাষায় হজ হলো নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত স্থানে বিশেষ কিছু কর্ম সম্পাদন করা। হজের নির্দিষ্ট সময় হলো আশহুরে হুরুম বা হারাম মাসসমূহ তথা শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ; বিশেষত ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ দিন। হজের নির্ধারিত স্থান হলো মক্কা শরিফে কাবা, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফা, মুজদালিফা ইত্যাদি এবং মদিনা শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা। হজের বিশেষ আমল বা কর্মকাল হলো ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, অকুফে আরাফাহ, অকুফে মুজদালিফা, অকুফে মিনা, দম, কোরবানি, হলক, কছর, জিয়ারতে মদিনা—রওজাতুল রাসুল ইত্যাদি।
পবিত্র হজ আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ বিধান। হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সমর্থ পুরুষ ও নারীর ওপর হজ ফরজ। হজ সম্পর্কে কোরআন শরিফে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেই সব মানুষের জন্য হজ ফরজ করে দেওয়া হয়েছে, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে।’ (সুরা আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রকৃত হজের পুরস্কার বেহেশত ব্যতীত অন্য কিছুই হতে পারে না। সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যাঁরা হজ পালন করবেন, আল্লাহ তাআলা তাঁদের হজ কবুল করবেন এবং তাঁদের জন্য অফুরন্ত রহমত ও বরকত অবধারিত।
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হজ মানুষকে নিষ্পাপে পরিণত করে, যেভাবে লোহার ওপর থেকে মরিচা দূর করা হয়।’ (তিরমিজি)। যে ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে অথচ তিনি হজ আদায় করেন না, তাঁর জন্য রয়েছে বিশেষ সাবধান বাণী। হজ মানুষকে নিষ্পাপ করে দেয়। রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যথাযথভাবে হজ পালন করে, সে পূর্বেকার পাপ থেকে এ রকম নিষ্পাপ হয়ে যায়, যে রকম সে মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন নিষ্পাপ ছিল।’ (বুখারি)।
জীবনে একবার হজ করা ফরজ। সামর্থ্যবানদের জন্য প্রতি পাঁচ বছর অন্তর হজ করা সুন্নত। সুযোগ থাকলে বারবার বা প্রতিবছর হজ করাতে বাধা নেই। যেকোনো অর্থ দ্বারা হজ সম্পাদন করা যাবে। হাদিয়া বা অনুদানের টাকা দিয়েও হজ করলে তা আদায় হবে। চাকরি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল হিসেবে কর্তব্য কাজের সুবাদে হজ করলেও হজ আদায় হবে। এটি বদলি হজ না হলে নিজের ফরজ হজ আদায় হবে; ফরজ হজ আগে আদায় করে থাকলে এটি নফল হবে। নফল হজ অন্য কোনো ব্যক্তির বদলি হজের নিয়তে আদায় করলে তা–ও হবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি)।
বদলি হজ
হজ সম্পাদনে নিজে শারীরিকভাবে অক্ষম হলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো যায়। বদলি হজে যিনি হজ সম্পাদন করেন, যিনি অর্থায়ন করেন এবং যাঁর জন্য হজ করা হয়—সবাই পূর্ণ হজের সওয়াব লাভ করেন। যাঁরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ আদায় করতে পারেননি, তাঁদের কর্তব্য হলো বদলি হজ করানোর জন্য অসিয়ত করে যাওয়া। অসিয়তকৃত বদলি হজ অসিয়তকারীর সম্পদ বণ্টনের আগে প্রতিপালন করা বা সম্পাদন করানো ওয়ারিশদের জন্য ওয়াজিব। অসিয়ত না করে গেলেও কোনো ওয়ারিশ বা কেউ নিজ উদ্যোগে বা ব্যক্তিগতভাবে তা আদায় করতে বা করাতে পারবেন। এতেও মৃত ব্যক্তি দায়মুক্ত হবেন এবং বদলি হজ করনেওয়ালা ও করানেওয়ালা উভয়ে সওয়াবের অধিকারী হবেন।
জীবিত বা মৃত যেকোনো ব্যক্তিরও বদলি হজ করানো যায়। আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধব অথবা পরিচিত-অপরিচিত যে কেউ যেকোনো ব্যক্তির বদলি হজ করতে বা করাতে পারেন। বদলি হজ আদায় করতে বা করাতে যাঁর জন্য বদলি হজ করা হবে বা করানো হবে, তাঁর অনুমতি বা অবগতির প্রয়োজন নেই; তবে সম্ভবপর হলে তা উত্তম। বদলি হজ সম্পাদনের জন্য আগে নিজের হজ আদায় করা শর্ত নয়; বরং নতুনদের দ্বারা বদলি হজ করালে তাঁর নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, আবেগ ও অনুরাগ বেশি থাকে। তবে যাঁর নিজের হজ অনাদায়ি রয়েছে, তিনি বদলি হজ করতে পারবেন না। বদলি হজ আত্মীয়-অনাত্মীয়, নারী-পুরুষ যে কেউ করতে পারেন। তবে বিজ্ঞ পরহেজগার লোক হলে উত্তম।
ওমরাহ
ওমরাহ আরবি শব্দ। ওমরাহর আভিধানিক অর্থ হলো ধর্ম, কর্ম, ইবাদত, সুখকর, সেবা, স্থিতিশীল, জীবন, মহাপ্রাচীন, স্থাপত্য-স্থাপনা, প্রাপ্তি, অভ্যর্থনা, জিয়ারত বা সফর ও ইচ্ছা। যিনি ওমরাহ করেন, তাঁকে ‘মুতামির’ বলা হয়। (লিসানুল আরব)। ইসলামি পরিভাষায় ওমরাহ হলো নির্ধারিত স্থানে নির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদন করা। ওমরাহর নির্দিষ্ট কাজকর্ম হলো ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, হলক, কছর ইত্যাদি। ওমরাহর নির্ধারিত স্থান হলো কাবা শরিফ, সাফা-মারওয়া ইত্যাদি। আফাকি তথা দূরবর্তী ওমরাহ সম্পাদনকারীর জন্য মদিনা মুনাওয়ারায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নত। ওমরাহ সম্পাদনের বিশেষ কোনো সময় সুনির্দিষ্ট নেই; তবে হজের নির্ধারিত বিশেষ সময়ে (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ দিন) ওমরাহ পালন করা বিধেয় নয়; এই পাঁচ দিন ছাড়া বছরের যেকোনো দিন যেকোনো সময় ওমরাহ প্রতিপালন করা যায়। হজের সফরেও ওমরাহ করা যায়। একই সফরে একাধিক ওমরাহ করতেও বাধা নেই। হজের আগেও (হজ না করেও) ওমরাহ করা যায় এবং হজের পরও বারবার ওমরাহ করা যায়। হজ যেমন জীবনে একবার ফরজ, তেমনি ওমরাহ জীবনে অন্তত একবার সুন্নত।
রমজানে ওমরাহ পালন করা হজের সমান সওয়াব; শাওয়াল মাসও ওমরাহ করার জন্য উত্তম সময়। তবে হজ ফরজ থাকা অবস্থায় তা আদায়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হজ সম্পন্ন না করে বারবার ওমরাহ করা অযৌক্তিক। কারণ, শত-সহস্র ওমরাহও হজের সমকক্ষ হবে না। অনুরূপভাবে ওমরাহ আদায় করলে হজ ফরজ হয়ে যায়, এমনটিও সঠিক নয়।
ওমরাহর জন্যও হজের মতোই মিকাত থেকে ইহরাম করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে আমাদের মিকাত হলো ইয়ালামলাম পাহাড়, যা জেদ্দার পূর্বে অবস্থিত। মদিনা থেকে মিকাত হলো জুলহুলায়ফা নামক স্থান। মক্কা থেকে ওমরাহ করতে চাইলে তার মিকাত হলো তানয়িম বা আয়িশা মসজিদ অথবা জিরানা নামক জায়গা। (মক্কা থেকে হজের ইহরামের জন্য মিকাত প্রযোজ্য নয়)। ওমরাহকে ‘ওমরাহ হজ’ বা ছোট হজও বলা হয়।
ওমরাহ সম্পর্কে কোরআন করিমে রয়েছে: ‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনাবলির অন্যতম; তাই যারা হজ করবে বা ওমরাহ করবে, তারা এতদুভয়ের প্রদক্ষিণ (সায়ী) করবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৮)। ওমরাহ পালন করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল। এটি পুরুষ ও মহিলা সবার জন্য প্রযোজ্য। ওমরাহ করলে হজ ফরজ হয়ে যায়, এ রকম কোনো বিধান নেই। মক্কা-মদিনার প্রতি আকর্ষণ ও হৃদয়ের টান ইমানের পরিচায়ক। তাই অনেকে প্রেমের টানে বারবার হজ ও ওমরাহ করে থাকেন।
ওমরাহ নিজের জন্য যেমন করা যায়, তেমনি অন্যদের জন্যও করা যায়। জীবিত বা মৃত, ছোট বা বড়, আত্মীয় বা অনাত্মীয় যেকোনো ব্যক্তির জন্যও ওমরাহ আদায় করা যায়। যার জন্য ওমরাহ পালন করা হবে, তাকে আগে বা পরে জানানো বা অনুমতি নেওয়া শর্ত নয়; তবে তা জানানো উত্তম। ওমরাহ যেহেতু ফরজ বা ওয়াজিব নয়, তাই এর বদলি আদায় করা জরুরি নয়। তবে কাউকে যদি কোনো সামর্থ্যবান ব্যক্তি অসিয়ত করে যান, তা আদায় করা ওয়াজিব হবে। এ ছাড়া কেউ কারও দ্বারা ওমরাহ করালে উভয়ে সমান সওয়াব পাবেন; কেউ কারও জন্য ওমরাহ সম্পাদন করলেও উভয়েই পূর্ণ সওয়াবের অধিকারী হবেন। (ফাতাওয়া শামি)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com

https://web.facebook.com/yousuf7181/ 
Read More

পিতা-মাতাই সন্তানের শ্রেষ্ঠ বন্ধু

1:22 AM 0

পিতা-মাতাই সন্তানের শ্রেষ্ঠ বন্ধু

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ

বন্ধুত্ব হলো ভালোবাসার সহজ-সরল নিঃস্বার্থ ও নিঃশর্ত রূপ। সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ এবং সবচেয়ে মূল্যবান হলো বন্ধুত্ব। বন্ধু ছাড়া সংসার অচল। আল্লাহ স্বয়ং বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন হজরত ইব্রাহীম (আ.)-কে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ও পরম বন্ধুরূপে বরণ করেছেন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে এবং সব মুমিনকে বন্ধুত্বের মর্যাদায় সম্মানিত করেছেন। কোরআন করিমে বলেছেন: ‘যারা ইমান আনল, আল্লাহ তাদের বন্ধু হলেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৭)।
বন্ধু শব্দটির মানে হলো যার সঙ্গে বন্ধন রয়েছে। আত্মিক বন্ধন থাকলেই সে বন্ধু হয়। পিতা-মাতা, ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে রয়েছে রক্তের বন্ধন। মুমিনের সঙ্গে আছে ইমানের বন্ধন। সব মানুষের সঙ্গে আছে মানবতার বন্ধন। সব সৃষ্টির সঙ্গে আছে আদি সৃষ্টির বন্ধন।
বন্ধুত্বের শব্দমালা
বাংলায় বন্ধু শব্দের সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ হলো বন্ধুয়া, বান্ধব, সুহৃদ, হিতৈষী, কল্যাণকামী, স্বজন, প্রণয়ী, প্রিয়জন; বন্ধু শব্দের স্ত্রী হলো বন্ধুনী, বান্ধবী। ফার্সিতে দোস্ত; উর্দুতে ইয়ার; হিন্দিতে মিত্র বা সখা; এসব শব্দ বাংলায়ও ব্যবহৃত হয়। বন্ধু শব্দের আরবি হলো রফিক, ওলি, সাদিক, খলিল, হাবিব ইত্যাদি। ‘রফিক’ শব্দটি হাদিসে এসেছে। নবীজি (সা.) বলেন: ‘প্রত্যেক নবীরই জান্নাতে বন্ধু (রফিক) থাকবে, জান্নাতে আমার রফিক (বন্ধু) হবে উসমান ইবনে আফফান (রা.)।’ (বুখারি)। ‘ওলি’ হলো সেই বন্ধু, যার সঙ্গে অভিভাবকত্ব ও দায়িত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান।
সাদিক শব্দটি ‘সিদক’ শব্দ থেকে উৎপন্ন, সিদক মানে সত্য ও সত্যতা। বন্ধুত্বের সম্পর্ক পরিপূর্ণ বিশ্বাসের; তার সঙ্গে মিথ্যা, ছলনা ও প্রতারণা অচিন্তনীয়; তাই প্রকৃত বন্ধুকে সাদিক বলা হয়। এই সাদিক থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় হলো সিদ্দীক; যে নিজের বন্ধুকে শর্তহীনভাবে বিশ্বাস করে। মহানবী (সা.)-কে নিরঙ্কুশ বিশ্বাসের কারণে হজরত আবু বকর (রা.) হয়েছেন ‘সিদ্দিক আকবার’ বা সবচেয়ে বড় বিশ্বাসী ব্যক্তি। সিদ্দিক শব্দের স্ত্রীরূপ হলো ‘সিদ্দিকা’। কোরআন করিমে হজরত মরিয়ম (আ.)-কে ‘সিদ্দিকা’ বলা হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে নবী-পত্নী মহীয়সী মা আয়েশা (রা.) ‘সিদ্দিকা’ অভিধায় ভূষিত হয়েছেন।
খলিল শব্দটি ‘খলল’ ধাতু থেকে নির্গত; খলল মানে হলো মিশে যাওয়া, দ্রবণ বা মিশ্রণ। বন্ধু যখন বন্ধুর বন্ধুত্বে লীন ও একাকার হয়ে যায় এবং সেই বন্ধুত্ব কখনো বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয়; তখন তাকে খলিল বলা হয়। যেমন, আল্লাহ তাআলা ইব্রাহিম (আ.)-কে ‘খলিল’ একনিষ্ঠ বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আর ধর্মে সে অপেক্ষা কে উত্তম! যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং একনিষ্ঠভাবে ইব্রাহিম (আ.)-এর ধর্মাদর্শ অনুসরণ করে? আর আল্লাহ ইব্রাহিম (আ.)-কে বন্ধুরূপে বরণ করেছেন। (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ১২৫)।
হাবিব শব্দটি ‘হাব্ব’ অথবা ‘হুব্ব’ শব্দ থেকে উদ্গত। ‘হুব্ব’ মানে ভালোবাসা, প্রেমপ্রীতি; তথা বন্ধুত্বের চরম ও পরম পর্যায়। ‘হাব্ব’ অর্থ বীজ বা শস্যদানা। আদি বীজ থেকে অঙ্কুরিত ভালোবাসা বা বন্ধুত্বকে ‘মহব্বত’ বলা হয়। যে বন্ধুর বন্ধুত্ব দ্বিপত্র বীজের উদ্গমের আগে অঙ্কুরেই সযত্নে সংরক্ষিত থাকে এবং কালক্রমে পর্যায়ক্রমিকভাবে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে পত্রপল্লবে ফুলে-ফলে সুশোভিত হতে থাকে; যা আদিতেও একীভূত ছিল এবং অনন্তকাল অবিচ্ছিন্ন থাকবে, সেই পরম বন্ধুকে বলা হয় ‘হাবিব’। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন আল্লাহর প্রিয় ‘হাবিব’। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন: ‘আমি আল্লাহর হাবিব (প্রিয়তম বন্ধু); কিন্তু গৌরব করছি না।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
বন্ধুত্বের নানা দিক
সৎকর্মের জন্য সজ্জনদের বন্ধুত্ব, যথাযথ পাত্রে বন্ধুত্ব, বন্ধুত্বের তাগিদে সৎকাজ করা দুনিয়ায় সফলতার সোপান ও আখেরাতে মুক্তির পথ ও পাথেয়। অপাত্রে বন্ধুত্ব, অবৈধ কাজের জন্য বন্ধুত্ব, অন্যায় ও অসৎ সঙ্গীদের মিথ্যা প্রতারণামূলক বন্ধুত্বের ফাঁদ ইহজগতে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা ও পরকালে দোজখের দ্বার। সেদিন রোজ কিয়ামতে পাপীরা বলবে, ‘হায়, দুর্ভোগ আমার! যদি আমি অমুককে বন্ধু না বানাতাম; আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার কাছে উপদেশ পৌঁছার পর। শয়তান তো মানুষের জন্য মহা প্রতারক।’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ২৮)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আমি তোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি তা হতে তারা তোমার পদস্খলন ঘটানোর চেষ্টা প্রায় চূড়ান্ত করেছিল; যাতে তুমি আমার সম্বন্ধে এর বিপরীত মিথ্যা রচনা করো; তবেই তারা তোমাকে নিশ্চিত বন্ধুরূপে গ্রহণ করত।’ (সুরা-১৭ ইসরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৭৩)। পথভ্রষ্ট বন্ধুরা যারা অন্যায় কাজে দুনিয়ায় একে অন্যের সহযোগিতা করেছিল এবং এ কারণে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের, বিশ্বস্ততা ও নির্ভরতার চরম পরাকাষ্ঠাও দেখিয়েছিল; তারা পরকালে একে অপরের চরম শত্রুতে পরিণত হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা তো তাদের অজ্ঞাতসারে আকস্মিকভাবে কিয়ামত আসার অপেক্ষা করছে। সেদিন বন্ধুরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে; তবে মুত্তাকি পরহেজগারগণ নয়।’ (সুরা-৪৩ যুখরুফ, আয়াত: ৬৬-৬৭)। সৎকর্মশীল নেককার লোকেরা ইহজগতে যেমন ভালো বন্ধু; একে অন্যকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করেন এবং মন্দ কাজ থেকে নিরুৎসাহিত করেন; অনুরূপ রোজ কিয়ামতে কঠিন হাশরে বিচারের দিনেও তাঁরা একে অন্যের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ ও ক্ষমাপ্রার্থনা করবেন; যা তাঁদের উভয়ের নাজাতের অছিলা হবে।
কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে আল্লাহর আরশের ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না। সেদিন আরশের ছায়ার নিচে যে সাত প্রকার লোক স্থান পাবেন, তাঁদের এক প্রকার হলন ওই সব লোক, যাঁরা বন্ধুত্ব করে একে অন্যকে ভালোবাসেন আল্লাহর জন্য। হাদিস শরিফে আছে: ‘মানুষ চেনা যায় তার বন্ধুর মাধ্যমে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
সন্তানের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ
পিতা-মাতা শুধু সন্তানের অভিভাবকই নন; তাঁরা সন্তানের সবচেয়ে আপন ও সবচেয়ে নিকটজন। তাই পিতা-মাতাকে সন্তানের সঙ্গে স্নেহবৎসল আচরণের পাশাপাশি বন্ধুসুলভ আচরণও করতে হবে। যাতে সন্তান তাঁদের শ্রদ্ধা করার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুও ভাবতে পারে। পিতা-মাতা সন্তানকে শাসন করার সঙ্গে বন্ধুভাবও বজায় রাখবেন, যাতে সন্তান নির্ভয়ে প্রাণ খুলে মনের কথা তাঁদের কাছে ব্যক্ত করতে পারে; অকপটে প্রাণ খুলে সবকিছু বলতে পারে। না হলে তাদের সুকুমারবৃত্তি ও মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হবে এবং তারা অসৎ বন্ধুর পাল্লায় পড়ে বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব
বন্ধুত্বের পর্যায়ক্রম: বন্ধুত্ব আল্লাহর সঙ্গে; এই বন্ধুত্ব হবে ফরজ-ওয়াজিব আদায় ও হারাম-হালাল মেনে কোরআন তিলাওয়াত ও তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে। বন্ধুত্ব প্রিয় নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে; এই বন্ধুত্ব হবে আদর্শ সুন্নতি জীবন যাপন ও অত্যধিকসংখ্যক দরুদ শরিফ পাঠের মাধ্যমে। বন্ধুত্ব পিতা-মাতার সঙ্গে; সদাচার, আনুগত্য ও খেদমতের মাধ্যমে। বন্ধুত্ব স্বামী-স্ত্রীর মাঝে; বিশ্বস্ততা, দায়িত্ববোধের মাধ্যমে। বন্ধুত্ব ভাইবোনের সঙ্গে; সদ্ব্যবহার, মমত্ব ও নিঃস্বার্থতার মাধ্যমে।
বন্ধুত্ব ছেলেমেয়ে, সন্তানসন্ততির সঙ্গে; বন্ধুসুলভ আচরণ, কর্তব্যপরায়ণতা ও স্নেহমমতার মাধ্যমে। বন্ধুত্ব মুমিন মুসলিমের সঙ্গে; নেক আমলে সহযোগিতা তথা সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের মাধ্যমে। বন্ধুত্ব আত্মীয়স্বজন, আপনজন, নিকটতম পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে; সাহায্য-সহযোগিতা ও সদুপদেশের মাধ্যমে। বন্ধুত্ব সব মানুষ ও সৃষ্টিকুলের সঙ্গে; কল্যাণকামিতা ও সুরক্ষার মাধ্যমে।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com

https://web.facebook.com/yousuf7181/ 
Read More

জিলকদ মাসের ফজিলত ও আমল

1:21 AM 0

জিলকদ মাসের ফজিলত ও আমল

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ


অলংকরণ: তুলিজিলকদ হলো আরবি চান্দ্রবছরের একাদশ মাস। এটি হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) দ্বিতীয় মাস এবং জিলহজের (হজের মাস) জোড়া মাস। হারাম বা নিষিদ্ধ চার মাসের তৃতীয় মাস হলো এই মাস। হারাম চার মাস হলো মহররম (১ম মাস), রজব (৭ম মাস), জিলকদ (১১তম মাস) ও জিলহজ (১২তম মাস)। হারাম চার মাসের মধ্যে যে তিনটি মাস একসঙ্গে, তার সূচনা মাস হলো জিলকদ মাস। ঈদুল ফিতর (শাওয়াল মাস) ও ঈদুল আজহার (জিলহজ মাস) মাঝামাঝিতে জিলকদ মাসের অবস্থান হওয়ায় এই মাসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
ইবাদতের প্রস্তুতিমূলক বিশ্রাম
জিলকদ মাসের প্রকৃত আরবি নাম হলো ‘জুলকাআদাহ’। ফারসিতে ‘জিলকাআদা’; উর্দুতে ‘জিলকাআদ’; বাংলায় ‘জিলকদ’ রূপ ধারণ করেছে। ‘জুলকাআদাহ’ বা ‘জিলকদ’ অর্থ হলো বসা বা স্থিত হওয়া, বিশ্রাম নেওয়া। জিলকদ মাসের আগের চার মাস (রজব, শাবান, রমান, শাওয়াল) ধারাবাহিক নির্ধারিত ইবাদতে ব্যস্ততম মাস। যেমন: রমজান হলো আল্লাহর মাস, ইবাদতের ভূমি কর্ষণের মাস, বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাস। শাবান হলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাস, ইবাদতের বীজ বপনের মাস; নিসফ শাবান বা শবে বরাত এবং সর্বাধিক নফল রোজা ও নফল ইবাদতের মাস। রমজান হলো উম্মতের মাস, ফসল তোলার মাস, ফরজ রোজা, তারাবির নামাজ, কিয়ামুল্লাইল; কোরআন নাজিলের মাস এবং ইবাদত–তিলাওয়াতে মশগুল থাকার মাস। শাওয়াল মাস হলো ঈদুল ফিতর, সদকাতুল ফিতর ও নির্ধারিত সুন্নত ছয় রোজার মাস। অনুরূপ জিলকদ মাসের পরের দুই মাস (জিলহজ মাস ও মহররম মাস) ইবাদতে ব্যস্ততর মাস। যেমন: জিলহজ মাস হজ, ঈদুল আজহা ও কোরবানির মাস; মহররম মাস আশুরার মাস। অর্থাৎ জিলকদ মাসের আগের চার মাস যেমন ইবাদতে ব্যস্ততায় মশগুল থাকতে হয়, তেমনি জিলকদ মাসের পরের দুই মাসও ইবাদতে আকুল থাকতে হবে। মাঝের একটি মাস জিলকদ, যেহেতু মুমিন সামান্য বিশ্রামের ফুরসত পেয়ে থাকেন, তাই এ মাসের নাম জুলকাআদাহ (জিলকদ) বা বিশ্রামের মাস।
পাপ পরিহারের ঐতিহাসিক মাস
ঈদুল ফিতর (রোজার ঈদ) বিগত ও ঈদুল আজহা (কোরবানির ঈদ) সমাগত, মাঝে এই জিলকদ মাসে নির্দিষ্ট কোনো ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুআক্কাদা আমল নেই বিধায় এটি জিলকদ মাস বা বিশ্রামের মাস। এই সময় আরবের লোকজন বাণিজ্য থেকে ফিরে আসত, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসত, তাই এই মাস বিশ্রামের মাস। ঋতুর পরিবর্তনে এই সময়টায় স্থানীয় আরবের লোকজনের হাতে তেমন কোনো কাজ থাকত না। আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত এবং অন্যায়–অপরাধ (মদ্যপান) থেকেও নিবৃত্ত থাকত। এসব কারণেও এই মাসের নাম জিলকদ। (লিসানুল আরব, ইবনে মানজুর)।
মুমিনের সওগাত অবসরে ইবাদত
জিলকদ মাস ইবাদতের ব্যস্ততার পর বিশ্রামের জন্য আল্লাহর উপহার। জিলকদ মাস হলো চার মাস ইবাদতের ক্লান্তির পর পরবর্তী দুই মাসের ইবাদতের জন্য শক্তি অর্জনের প্রস্তুতিমূলক বিশ্রাম। রমজানের পূর্ণ এক মাস ফরজ রোজা পালনের শক্তি অর্জনের জন্য যেমন আগের দুই মাসে (রজব ও শাবান) ১০টি ও ২০টি নফল রোজা এবং রমজানের ২০ রাকাত তারাবির প্রস্তুতি হিসেবে আগের দুই মাসে (রজব ও শাবান) বেশি বেশি নফল নামাজ রয়েছে। তেমনি জিলকদ মাসের পরে জিলহজ মাসে ৯টি নফল রোজা ও নফল ইবাদত এবং তারপরের মহররম মাসে ১০টি নফল রোজা ও নফল ইবাদতের প্রস্তুতি হিসেবে জিলকদ মাসে বিশ্রামের পাশাপাশি কিছু কিছু নফল ইবাদত করা বাঞ্ছনীয় ও শ্রেয়। হাদিস শরিফে আছে, পরকালে নেককার পরহেজগার দ্বীনদার লোকদের কোনো আক্ষেপ থাকবে না; তবে একটি বিষয়ে তাঁদের আক্ষেপ থাকবে, তা হলো যে সময়টা তাঁরা ইবাদত ছাড়া কাটিয়েছেন, সেই সময়টার বিষয়ে তাঁদের অনুশোচনা থাকবে যে কেন তাঁরা এই সময়টাও নেক আমল দ্বারা পরিপূর্ণ করলেন না। তাহলে তাঁরা আরও বেশি আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারতেন। এই একটি মাস ইবাদতে লিপ্ত হতে পারলে বছরের বারোটি মাসের মধ্যে রজব থেকে মহররম পর্যন্ত আটটি মাস একটানা ইবাদতে শামিল হয়ে যায়, যা পরম সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘যখনই অবসর পাও দাঁড়িয়ে যাও, তোমার রবের ইবাদতে মশগুল হও।’ (সুরা: ইনশিরাহ, আয়াত: ৭-৮)।
সময় জীবনের মূলধন
সময় হলো মানব জীবনের মূলধন। এই মহামূল্যবান সম্পদ হেলায় নষ্ট করা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘শপথ! সময়ের, নিশ্চয় সব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; তবে তারা নয়, যারা ইমান আনে, সৎকর্ম করে, সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উৎসাহ প্রদান করে।’ (সুরা: আসর, আয়াত: ১-৩)। হাদিস শরিফে আছে: তোমরা পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসকে গুরুত্ব দাও; ব্যস্ততার আগে অবসরকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, দারিদ্র্যের আগে প্রাচুর্যকে, বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, মৃত্যুর আগে জীবনকে। (মুসলিম শরিফ ও তিরমিজি শরিফ)। অর্থাৎ অবসরকে কাজে লাগাও (নফল ইবাদতের মাধ্যমে) ব্যস্ততা আসার আগে, সুস্থতাকে কাজে লাগাও (আল্লাহর হুকুম পালনের মাধ্যমে) অসুস্থ হওয়ার আগে, প্রাচুর্যকে কাজে লাগাও (দান করার মাধ্যমে) দারিদ্র্য আসার আগে, যৌবনকে কাজে লাগাও (বেশি বেশি নেক আমলের মাধ্যমে) বার্ধক্য আসার আগে, জীবনকে কাজে লাগাও (পরোপকারের মাধ্যমে) মৃত্যু আসার আগে। (সুনানে তিরমিজি)।
হাদিস শরিফে আছে, ‘কিয়ামতের দিনে হাশরের ময়দানে কোনো আদম সন্তান পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কদমও নড়তে পারবে না। সে প্রশ্ন পাঁচটি হলো: জীবন কী কাজে শেষ করেছে, যৌবন কী কাজে লাগিয়েছে; কোন পথে আয় করেছে, কোন পথে ব্যয় করেছে এবং নিজের জ্ঞানমতো আমল করেছে কি না।’ (তিরমিজি, ২/৬৭; আরবাঈন, নববি: ১৯, ২০ ও ২১)। অর্থাৎ, জীবনের লক্ষ্য–উদ্দেশ্য কী ছিল? যৌবনকাল বা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কী কাজে ব্যয় করা হয়েছে বা কীভাবে কোন কাজে লাগানো হয়েছে? ধনদৌলত, মানসম্মান কীভাবে অর্জন ও উপার্জন করা হয়েছে? অর্থ–সম্পদ, প্রভাব–প্রতিপত্তি কোন পথে ব্যয় করা হয়েছে? (কীভাবে ভোগ ও উপভোগ করা হয়েছে)। সর্বশেষ প্রশ্নটি থাকবে জ্ঞান ও বিবেকের অনুসরণ করেছে, নাকি নফস ও কুপ্রবৃত্তির আনুগত্য করেছে। হাদিস শরিফে আরও আছে, প্রজ্ঞা মুমিনের হারানো সম্পদ। (তিরমিজি, ৫/৫১; ইবনে মাজা, ২/১৩৯৫)। সময় বা আয়ু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেওয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। রোজ কিয়ামতে কঠিন হাশরের ময়দানে আল্লাহর আদালতে বিচারের সময় প্রতিটি নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কোরআন করিমে বলেন: ‘অতঃপর সেদিন তোমাদের প্রতিটি নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (সুরা: তাকাসুর, আয়াত: ৭)।
জিলকদ মাসের আমল
জিলকদ মাসের আমল হলো: প্রতি মাসের মতো এই জিলকদ মাসের ১, ১০, ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখে নফল রোজা পালন করা। চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিদের {আদি পিতা প্রথম নবী হজরত বাবা আদম (আ.)} সুন্নত রোজা রাখা। প্রতি সপ্তাহের প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নতে নববি রোজা পালন করা। প্রতি শুক্রবার নফল রোজা রাখা। সলাতুত তাসবিহ এবং প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজ (তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত বা দুহা, জাওয়াল ও আউওয়াবিন) পড়া। বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা এবং বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। দান-খয়রাত বেশি বেশি করা। জিলহজ মাসের ৯টি সুন্নত রোজা ও মহররম মাসের ১০টি রোজার প্রস্তুতি হিসেবে এই মাসে কিছু হলেও নফল রোজা করা। হজের প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং কোরবানির প্রস্তুতি নেওয়া।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com


https://web.facebook.com/yousuf7181/ 
Read More

ইসলামিক জীবন

1:14 AM 0

নারী ও শিশুর হজের বিধান

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ
মসজিদে নববিতে পুরুষ-মহিলা একত্রে থাকতে পারবেন না। নারীদের বসার, নামাজের ও ইবাদতের জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থা আছে। মক্কা মুকাররমায় কাবা শরিফে পুরুষ-নারী একত্রে  থাকতে বা একত্রে বসতে অসুবিধা নেই। কিন্তু নামাজের আগে নারীদের উঠিয়ে দিয়ে তাঁদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ততক্ষণে নারীদের জন্য সংরক্ষিত স্থান পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় নারীদের নামাজে অংশগ্রহণ করতে বিশেষ অসুবিধা হয়ে   থাকে। সে জন্য আগে থেকেই নারীরা তাঁদের নির্দিষ্ট স্থানে বসার চেষ্টা করবেন।
হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় করণীয়
হায়েজ (ঋতুস্রাব) ও নেফাসের (প্রসবোত্তর স্রাব)সময় মসজিদুল হারাম শরিফে প্রবেশ ও তাওয়াফ করা যায় না, নামাজ পড়তে বা কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করতে পারবেন না এবং উচ্চ স্বরে তালবিয়া পড়বেন না। কিন্তু ইহরাম বাঁধা ও অন্যান্য দোয়া পড়া যায়। হায়েজ ও নেফাসের সময় তাওয়াফে কুদুম না করতে পারলে তা মাফ হয়ে যাবে, কিন্তু হজের পর একটা ওমরাহ করতে হবে। হায়েজ ও নেফাসের সময় অকুফে আরাফাত ও অকুফে মুজদালিফা করতে পারবেন, কঙ্কর মারতে পারবেন, কিন্তু তাওয়াফে জিয়ারত হায়েজের পরে করবেন। ফরজ তাওয়াফ মাফ নেই। অবশ্য বিদায়ী তাওয়াফ হায়েজ ও নেফাসের ওজরে না করতে পারলে এবং সময় না পেলে এর জন্য কাফফারা দিতে হবে না; দূর থেকে বিদায় নেওয়া যাবে। কোনো নারী ইচ্ছা করলে হজের কার্যাবলি সম্পাদনের সুবিধার্থে হজ চলাকালীন ওষুধ বা বড়ি খেয়ে সাময়িকভাবে মাসিক বন্ধ রাখতে পারেন।
শিশুদের হজ
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় শিশু বলতে বোঝানো হয় অপ্রাপ্তবয়স্ক তথা নাবালক অর্থাৎ যে সাবালকত্ব অর্জন করেনি। বাংলাদেশের পরিবেশে মেয়েশিশুরা ১১ থেকে ১২ বছরে এবং ছেলেশিশুরা ১৩ থেকে ১৪ বছরে সাবালক হয়। এই সময়ে তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয়। এসব পরিবর্তন বিজ্ঞ অভিভাবক বুঝতে পারেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের ওপর হজ ফরজ নয়। তবে কেউ  হজ করলে তার নফল হজ আদায় হবে। হজ আদায়কালে ছেলেশিশুদের পুরুষদের মতো ইহরাম পরতে হবে, মেয়েশিশুরা নারীদের মতো স্বাভাবিক পোশাকেই ইহরামের নিয়ত করবে। নিয়ত তালবিয়া ইত্যাদি বলতে না পারলে অভিভাবক তার পক্ষ থেকে আদায় করবেন। আর যদি সে নিজে হজের কার্যাদি পালনে সক্ষম হয়, তো নিজেই করবে। নাবালক ছেলেমেয়েরা ইহরাম অবস্থায় কোনো নিষিদ্ধ কাজ করলে তার কাফ্ফারা দিতে হবে না। শিশুদের হজের কোনো ফরজ ছুটে গেলে বা বাকি থাকলে এই হজ কাজা করতে হবে না। শিশুকালে হজ করলে বড় হওয়ার পর যদি হজ ফরজ হয়, তবে পুনরায় হজ আদায় করতে হবে।
হিজড়াদের হজ ও ইবাদত
মহান আল্লাহর সৃষ্টির সেরা হলো মানুষ। মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন নারী ও পুরুষরূপে। মানব সৃষ্টির এই রহস্য সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে বলা হয়েছে: হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক সত্তা (আদম) থেকে; আর তা থেকে তৈরি করলেন তাঁর জোড়া (হাওয়া) এবং এতদ্বয় থেকে বিস্তৃত করলেন বহু পুরুষ ও নারী। (সুরা নিসা, আয়াত: ১)। পবিত্র তিনি, যিনি সৃজন করেছেন সবকিছু জোড়ায় জোড়ায়, যা ভূমিতে উৎপন্ন হয় এবং তোমাদের নিজেদের মাঝেও, আর তাতেও যা তোমরা জানো না। (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ৩৬)। আর যিনি বানিয়েছেন সবকিছু জোড়ায় জোড়ায়। (সুরা জুখরুফ, আয়াত: ১২)। আর নিশ্চয় তিনি সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও নারী। (সুরা নজম, আয়াত: ৪৫)। হে মানবজাতি! নিশ্চয় আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে। (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩)। আর আমি বানিয়েছি তোমাদের জোড়ায় জোড়ায় (পুরুষ ও নারী)। (সুরা নাবা, আয়াত: ৮)। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও নারী। (সুরা নজম, আয়াত: ৪৫)। অতঃপর তিনি করলেন তা হতে জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও নারী। (সুরা কিয়ামাহ, আয়াত: ৩৯)। আর যা তিনি সৃষ্টি করেছেন পুরুষ ও নারী। (সুরা লাইল, আয়াত: ৩)। আসমান ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহর জন্যই, তিনি যা ইচ্ছা সৃজন করেন; যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা পুরুষ ও নারীতে দম্পতি তৈরি করেন আর যাকে ইচ্ছা নিঃসন্তান রাখেন; নিশ্চয় তিনি মহাজ্ঞানী ক্ষমতাবান। (সুরা শুরা, আয়াত: ৪৯-৫০)।
হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা এদের হিজড়া বোলো না; এরা নারী বা পুরুষ। ফকিহগণ হিজড়াকে দুই ভাগে বিভাজিত করেছেন; যথা: নারী হিজড়া ও পুরুষ হিজড়া। অর্থাৎ পুরুষ হিজড়া হলো অপূর্ণ পুরুষ আর নারী হিজড়া হলো অপূর্ণ নারী। ইমান, ইসলাম, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত এমনকি বিয়েসহ সব ইসলামি বিধিবিধান তাদের ওপর (নারী বা পুরুষ হিসেবেই) বর্তাবে।
হিজড়া হলো মনোদৈহিক বৈকল্য বা শারীরবৃত্তীয় ও মনোজাগতিক বিকাশের অপূর্ণতা। এটি হরমোনঘটিত একটি সমস্যা। শরীরের যে হরমোনের কারণে একজন মানুষ পুরুষ বা নারী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়, সেই হরমোন পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকাই এর প্রধান কারণ। সুতরাং অত্যাধুনিক হরমোন চিকিৎসার মাধ্যমে এবং ক্ষেত্রবিশেষে শল্যচিকিত্সার মাধ্যমে এর পুরোপুরি স্থায়ী সমাধান সম্ভব। (রদ্দদুল মুহতার দুররুল মুখতার, ইবনু আবিদীন শামী; মানারুছ ছাবীল, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা: ৯১)।
নারী হিজড়ারা সাধারণ নারীদের মতো এবং পুরুষ হিজড়ারা সাধারণ পুরুষের মতো হজব্রত পালন করতে পারবেন। হজ আদায়কালে ছেলে হিজড়াদের পুরুষদের মতো ইহরাম পরতে হবে এবং মেয়ে হিজড়া নারীদের মতো পোশাকেই ইহরামের নিয়ত করবেন। (আশ শারহুল মুমাত্তি, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ১৪০; শারহুল মুনতাহা, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১৫০; আল ইখতিয়ার, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৯; আল মুগনি, খণ্ড: ৭, পৃষ্ঠা: ৬১৯; ফিকাহ বিশ্বকোষ, খণ্ড: ৬, পৃষ্ঠা: ২০৪)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
smusmangonee@gmail.com
https://web.facebook.com/yousuf7181/
Read More

নেটের গতি ধরে রাখুন

12:42 AM 0

নেটের গতি ধরে রাখুন

মহিউদ্দিন সোহেল | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ


কিছু কৌশল খাটালে স্মার্ট ফোনে ইন্টারনেটের গতি ঠিক রাখা সম্ভব। মডেল: মাহি, ছবি: কবির হোসেনঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবেন অনেকেই। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে অন্য শহর বা গ্রামে ইন্টারনেটের গতি এক নয়। তা সে মোবাইল ফোনেই হোক বা ল্যাপটপে, ট্যাবে।
কিছু কৌশল জানা থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই ইন্টারনেটের গতি একটু হলেও বাড়ানো যায়।
১ ইন্টারনেট সংযোগ পরীক্ষা করুন
ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা করার অ্যাপ যেমন স্পিডটেস্ট ব্যবহার করে দেখে নিতে পারেন বর্তমান ইন্টারনেটের গতির অবস্থা। গতি অনেকটা নির্ভর করে বেশি ব্যবহার, পিক আওয়ারে ব্যবহার, নেটওয়ার্ক এবং কী ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ (ডেটা প্ল্যান) নিয়েছেন তার ওপর। ওয়াই-ফাই বা মোবাইল নেটওয়ার্ক, যেটাই ব্যবহার করেন না কেন দেখতে হবে এর সিগন্যাল ঠিকমতো পাচ্ছেন কি না।
ফোন ক্যাশ পরিষ্কার করুন
আপনার ফোনের মেমোরি ও ক্যাশ মেমোরি পরিষ্কার করেও মোবাইল ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে পারেন। ফোনের মেমোরির পরিবর্তে এসডি কার্ড বা অনলাইনে ড্রপবক্স, গুগল ড্রাইভের মতো সেবা ব্যবহার করতে পারেন। মোবাইলের ক্যাশ মেমোরি যখন ভরা থাকে, যন্ত্রটিও তখন ধীরগতির হয়ে যায়, আর এ জন্য ইন্টারনেটের গতিও কমে যায়।
৩ অব্যবহৃত অ্যাপ ফেলে দিন
অনেক অব্যবহৃত অ্যাপ ফোনের কর্মক্ষমতা কমিয়ে ফেলে, যা ইন্টারনেটের গতির ওপর প্রভাব ফেলে। তাই অব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন ফেলে দিন (আনইনস্টল)।
৪ সঠিক নেটওয়ার্ক
টুজি নেটওয়ার্কের পরিবর্তে থ্রিজি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করুন। এতে গতি বাড়বে।
৫ নেটওয়ার্ক সেটিংস
আপনার ফোনের নেটওয়ার্ক সেটিংসে গিয়ে দেখুন সঠিক নেটওয়ার্কে যুক্ত আছে কি না। এটি শুধু টুজি বা থ্রিজির নেটওয়ার্কের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। অনেক মোবাইলের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে GSM/WCDMA/LTE নির্ধারিত হয়। যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণ না হয় তাহলে ম্যানুয়ালি নেটওয়ার্ক নির্বাচন করুন। আপনি যদি থ্রিজি ব্যবহারকারী হন তাহলে নেটওয়ার্ক টাইপ WCDMA বা 3G রাখুন।
৬ ব্রাউজার টেক্সট মোডে রাখুন
আপনার ছবির প্রয়োজন না হলে ব্রাউজার টেক্সট মোড হিসেবে রাখতে পারেন।
৭ ফাস্ট ওয়েব ব্রাউজার
ইন্টারনেটের ভালো গতির জন্য ফাস্ট ওয়েব ব্রাউজার যেমন: অপেরা মিনি, ইউসি বা ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করতে পারেন এবং নিয়মিত হালনাগাদ করুন।
৮ স্পিড বুস্ট অ্যাপ ব্যবহার করুন
ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর জন্য কিছু অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন যেমন: ইন্টারনেট বুস্টার অ্যান্ড অপটিমাইজার, ফাস্টার ইন্টারনেট ২এক্স, ইন্টারনেট স্পিড বুস্টার ইত্যাদি।
৯ অটো সিঙ্ক বন্ধ করুন
কিছু অ্যাপ যেমন ই-মেইল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিংক হতে থাকে, এসব অ্যাপের অটো সিঙ্ক সুবিধা নিষ্ক্রিয় করে রাখতে পারেন। আবার কিছু অ্যাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালানাগাদ হতে থাকে, এগুলোর অটো আপডেটও বন্ধ রাখতে পারেন।
http://www.prothom-alo.com
https://web.facebook.com/yousuf7181/ 
Read More
12:42 AM 0

নেটের গতি ধরে রাখুন

মহিউদ্দিন সোহেল | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ

কিছু কৌশল খাটালে স্মার্ট ফোনে ইন্টারনেটের গতি ঠিক রাখা সম্ভব। মডেল: মাহি, ছবি: কবির হোসেনঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবেন অনেকেই। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে অন্য শহর বা গ্রামে ইন্টারনেটের গতি এক নয়। তা সে মোবাইল ফোনেই হোক বা ল্যাপটপে, ট্যাবে।
কিছু কৌশল জানা থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই ইন্টারনেটের গতি একটু হলেও বাড়ানো যায়।
১ ইন্টারনেট সংযোগ পরীক্ষা করুন
ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা করার অ্যাপ যেমন স্পিডটেস্ট ব্যবহার করে দেখে নিতে পারেন বর্তমান ইন্টারনেটের গতির অবস্থা। গতি অনেকটা নির্ভর করে বেশি ব্যবহার, পিক আওয়ারে ব্যবহার, নেটওয়ার্ক এবং কী ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ (ডেটা প্ল্যান) নিয়েছেন তার ওপর। ওয়াই-ফাই বা মোবাইল নেটওয়ার্ক, যেটাই ব্যবহার করেন না কেন দেখতে হবে এর সিগন্যাল ঠিকমতো পাচ্ছেন কি না।
ফোন ক্যাশ পরিষ্কার করুন
আপনার ফোনের মেমোরি ও ক্যাশ মেমোরি পরিষ্কার করেও মোবাইল ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে পারেন। ফোনের মেমোরির পরিবর্তে এসডি কার্ড বা অনলাইনে ড্রপবক্স, গুগল ড্রাইভের মতো সেবা ব্যবহার করতে পারেন। মোবাইলের ক্যাশ মেমোরি যখন ভরা থাকে, যন্ত্রটিও তখন ধীরগতির হয়ে যায়, আর এ জন্য ইন্টারনেটের গতিও কমে যায়।
৩ অব্যবহৃত অ্যাপ ফেলে দিন
অনেক অব্যবহৃত অ্যাপ ফোনের কর্মক্ষমতা কমিয়ে ফেলে, যা ইন্টারনেটের গতির ওপর প্রভাব ফেলে। তাই অব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন ফেলে দিন (আনইনস্টল)।
৪ সঠিক নেটওয়ার্ক
টুজি নেটওয়ার্কের পরিবর্তে থ্রিজি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করুন। এতে গতি বাড়বে।
৫ নেটওয়ার্ক সেটিংস
আপনার ফোনের নেটওয়ার্ক সেটিংসে গিয়ে দেখুন সঠিক নেটওয়ার্কে যুক্ত আছে কি না। এটি শুধু টুজি বা থ্রিজির নেটওয়ার্কের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। অনেক মোবাইলের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে GSM/WCDMA/LTE নির্ধারিত হয়। যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণ না হয় তাহলে ম্যানুয়ালি নেটওয়ার্ক নির্বাচন করুন। আপনি যদি থ্রিজি ব্যবহারকারী হন তাহলে নেটওয়ার্ক টাইপ WCDMA বা 3G রাখুন।
৬ ব্রাউজার টেক্সট মোডে রাখুন
আপনার ছবির প্রয়োজন না হলে ব্রাউজার টেক্সট মোড হিসেবে রাখতে পারেন।
৭ ফাস্ট ওয়েব ব্রাউজার
ইন্টারনেটের ভালো গতির জন্য ফাস্ট ওয়েব ব্রাউজার যেমন: অপেরা মিনি, ইউসি বা ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করতে পারেন এবং নিয়মিত হালনাগাদ করুন।
৮ স্পিড বুস্ট অ্যাপ ব্যবহার করুন
ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর জন্য কিছু অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন যেমন: ইন্টারনেট বুস্টার অ্যান্ড অপটিমাইজার, ফাস্টার ইন্টারনেট ২এক্স, ইন্টারনেট স্পিড বুস্টার ইত্যাদি।
৯ অটো সিঙ্ক বন্ধ করুন
কিছু অ্যাপ যেমন ই-মেইল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিংক হতে থাকে, এসব অ্যাপের অটো সিঙ্ক সুবিধা নিষ্ক্রিয় করে রাখতে পারেন। আবার কিছু অ্যাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালানাগাদ হতে থাকে, এগুলোর অটো আপডেটও বন্ধ রাখতে পারেন।
http://www.prothom-alo.com
https://web.facebook.com/yousuf7181/ 
Read More
12:42 AM 0

কার জন্য কেমন ইন্টারনেট প্যাকেজ?

নাসির খান | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ

মডেল: মাহি ছবি: কবির হোসেনকিছুদিন আগে পর্যন্ত হয়তো ইন্টারনেট ব্যবহার অনেকটা শখের বিষয় ছিল। কিন্তু এখন দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যুক্ত হয়ে আছে ইন্টারনেট। পারস্পরিক যোগাযোগ, তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য আদান-প্রদান, ব্যবসার কাজ পরিচালনাসহ আরও বহু কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের মোট ব্যবহারকারীর মধ্যে একটি বড় অংশ মুঠোফোন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যম যেমন আলাদা হতে পারে একইভাবে সবার ব্যবহার ও প্রয়োজন এক রকম নয়। প্রয়োজন ও কাজের ধরন অনুযায়ী ইন্টারনেট সংযোগ বেছে নিলে খরচটাও নিয়ন্ত্রণের মধ্য রাখা সম্ভব হয়।
থ্রিজি ইন্টারনেটদেশের সবগুলো মুঠোফোন সংযোগদাতাই উচ্চগতির থ্রিজি ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকে। তবে সব সংযোগদাতা যে দেশব্যাপী এই সেবা দিতে পারছে এমন নয়। তাই ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনার আগে আপনি নির্দিষ্ট ‘কভারেজ’ এলাকার মধ্যে আছেন কি না, সেটি দেখে নেওয়া উচিত। ইন্টারনেট প্যাকেজগুলো বেশ কয়েকভাবে ভাগ করে তৈির করা হয়েছে। এগুলো মূলত ব্যবহারের ধরনের ওপর নির্ভর করে সাজানো হয়। প্যাকেজগুলোকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো সাধারণ ইন্টারনেট প্যাকেজ—যা নির্দিষ্ট কয়েক দিন বা কয়েক ঘণ্টার জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে। আর ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডেটা ব্যবহার করা যাবে। সংযোগদাতা ভেদে এই সময় ও ডেটার পরিমাণ কিছুটা আলাদা হয়ে থাকে। আবার কিছু সংযোগদাতা অফপিক সময়ে (সাধারণত কম ব্যবহার হয় যে সময়ে) বা গভীর রাতে ব্যবহারের জন্য অন্য সময়ের থেকে কিছুটা কম মূল্যের প্যাকেজ নির্বাচনের সুযোগ রেখেছে।
মুঠোফোন সংযোগদাতাদের সোশ্যাল প্যাকগুলো তাদের জন্য, যারা ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবারের মতো কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের বাইরে আর কিছুই করে না। বিশাল এই ইন্টারনেটের দুনিয়ায় যাদের ব্যবহার এই তিন-চারটি ওয়েবসাইটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের কথা ভেবেই এই প্যাকেজগুলো তৈরি করেছে। এই প্যাকেজ সক্রিয় থাকার পরে ওই তিন-চারটি ওয়েবসাইট-সেবার বাইরে কোনো ওয়েবসাইট দেখতে চাইলে আলাদা করে অন্য কোনো প্যাকেজও সক্রিয় রাখতে হতে পারে। সাধারণ ডেটা ভলিউম প্যাকেজ থেকে এই ধরনের সোশ্যাল প্যাকগুলোর মূল্য তুলনামূলক কম।
এই দুই ধরনের প্যাকেজের পাশাপাশি ‘স্মার্ট প্যাকেজ’ নামের কিছু সংযোগও আছে। থ্রিজির মাধ্যমে ভিডিও কল করা, এমএমএস ব্যবহার ইত্যাদির সময় ও সংখ্যার মাধ্যমে এই প্যাকেজগুলোর মূল্য নির্ধারণ হয়ে থাকে।
তারহীন ওয়াইম্যাক্স
উচ্চগতির তারহীন ইন্টারনেটের একটি জনপ্রিয় প্রযুক্তি হলো ওয়াইম্যাক্স। দেশে মোট দুটি অনুমোদিত ওয়াইম্যাক্স সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। থ্রিজি প্যাকেজগুলোর চেয়ে কম দামে এই সংযোগ পাওয়া যায়। প্রিপেইড এবং পোস্টপেইড ধরনের কিছু প্যাকেজ রয়েছে, যেখানে ইন্টারনেটের গতি ও ডেটা ভলিউমের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তবে সব প্যাকেজের ন্যূনতম ব্রডব্যান্ড হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য আলাদাভাবে মডেম ব্যবহার করতে হয়। তবে ওয়াইম্যাক্স মডেমের সঙ্গে রাউটার যুক্ত করে একাধিক ব্যবহারকারী ইন্টারনেট সংযোগটি ব্যবহার করতে পারেন একই সময়ে। আবার কিছু কিছু মডেমের সঙ্গে রাউটার যুক্ত করাই থাকে। তবে একটি বিষয় জেনে রাখতে হবে যে মুঠোফোন থেকে সরাসরি ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। ঢাকার বাইরে এই ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ কয়েকটি শহরে রয়েছে।
ব্রডব্যান্ড
ব্রডব্যান্ড বলতে সাধারণত তারের মাধ্যমে সংযুক্ত উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়। দেশের প্রায় সব জেলা, উপজেলায় ব্রডব্যান্ড সংযোগ নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এই ধরনের প্যাকেজগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে ইন্টারনেটের গতির ওপর এবং ডেটা ভলিউম উন্মুক্ত থাকে। তবে উচ্চগতির প্যাকেজগুলোতে কখনো কখনো সর্বোচ্চ ডেটা ভলিউম ব্যবহারের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে। একটি মাত্র তারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে সংযোগ দেওয়া হলেও রাউটার যুক্ত করে একই সঙ্গে অনেক ব্যবহারকারী একটি সংযোগ ব্যবহার করতে পারবেন।
বিটিসিএল এডিএসএল
বাংলাদেশ টেলিকম কোম্পানি লিমিটেড—বিটিসিএলের টেলিফোন সংযোগ-লাইনের ওপর ভিত্তি করেও একটি ইন্টারনেট ব্যবস্থা রয়েছে। উচ্চগতির এই নির্ভরযোগ্য সংযোগটি বেশ কয়েকটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে।
বাসা বা অফিসে ব্যবহার করার জন্য তারহীন ওয়াইম্যাক্স বা সাধারণ ব্রডব্যান্ড সংযোগ ব্যবহার করা যেতে পারে। মূল সংযোগের সঙ্গে রাউটার যুক্ত করে একাধিক ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে এবং সহজে নিজেদের মধ্যে ফাইল আদান-প্রদান করতে পারবেন। তবে সম্ভাব্য ব্যবহারকারীর সংখ্যার ওপর নির্ভর করে ইন্টারনেটের গতি নির্বাচন করা উচিত। মুঠোফোন অপারেটর, ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট, বিটিসিএল এডিএসএলের ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট প্যাকেজের মূল্য ও সেবার পরিধি বিস্তারিত উল্লেখ করা আছে। আর ব্রডব্যান্ড সংযোগগুলো সাধারণত এলাকা বা অঞ্চলভিত্তিক হয়ে থাকে। তাই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে ইন্টারনেট সংযোগগুলো কেনা যাবে।
ইন্টারনেট একটি বিশাল জগৎ, পৃথিবীর যে প্রান্তেই অবস্থান করা হোক না কেন ইন্টারনেটে যুক্ত থাকতে পারস্পরিক দূরত্বটি আর বুঝতে পারা যায় না। সামাজিক যোগাযোগের জন্য ফেসবুক বা অন্যান্য বেশ কিছু সেবা রয়েছে। তবে ইন্টারনেটের ব্যাপ্তি এবং ব্যবহার কেবল এই তিন-চারটি ওয়েবসাইটই নয়। ইন্টারনেটে নানা কাজের বহু ওয়েবসাইট ও সেবা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সঠিক ব্যবহার সাফল্য লাভের একটি মাধ্যম হতে পারে। 
Read More
12:42 AM 0

ব রেকর্ড ভেঙে পোকেমন গো

রিয়াদ জোবায়ের | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রকাশের পরপরই জনপ্রিয়তার বিচারে শীর্ষে উঠে আসে পোকেমন গো গেম l ছবি: এএফপিটেম্পল রান, অ্যাংরি বার্ড, ক্যানডি ক্রাশ কিংবা ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানসের মতো জনপ্রিয় সব গেমের রেকর্ড ভেঙেছে পোকেমন গো। ৬ জুলাই অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের জন্য উন্মুক্ত করার পর তিন দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ৫ শতাংশ অ্যান্ড্রয়েডে স্মার্টফোনে গেমটি ইনস্টল করা হয়েছে। ইনস্টল না করতে পেরে ভিন্নপথে খেলেছেন আরও ৩ শতাংশ ব্যবহারকারী। যাঁরা ইনস্টল করেছেন, তাঁদের ৬০ শতাংশ প্রতিদিন গড়ে ৪৩ মিনিট গেমটি খেলছেন। সিমিলার ওয়েবের এই তথ্য থেকেই পোকেমন গো গেমের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
ভিডিও গেম নির্মাতা নিনটেনডোর সঙ্গে সফটওয়্যার ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান নিয়ানটিক আর দ্য পোকেমন কোম্পানির প্রকাশনায় পোকেমন গো গেমটি বিনা মূল্যে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ থেকেই খেলা যাবে। ৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে উন্মুক্ত করা হলেও ইউরোপের বাজারে গেমটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়। ১৩ জুলাই জার্মানিতে; ১৪ জুলাই যুক্তরাজ্যে; স্পেন পর্তুগাল ও ইতালিতে ১৫ জুলাই এবং বাকি দেশগুলোতে ১৬ জুলাই বাজারে আসে এটি। বাজারে আসার পর যুক্তরাজ্যের অ্যাপ মার্কেটেও বেশ পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে অবশ্য একটি বড় অংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গেমাররা ভিপিএন ব্যবহার করে কিংবা নিজের ফোনের অ্যাপ স্টোরের ঠিকানা পরিবর্তন করে যুক্তরাজ্যের অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করেছেন।
অর্থনৈতিক দিক থেকে ব্যাপক সফলতার মুখ দেখেছে গেমের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। বাজারে উন্মুক্ত করার পাঁচ দিনের মধ্যে নিনটেন্ডোর বাজারদর ৯০০ কোটি ডলার বেড়ে গেছে।
স্মার্টফোনের ক্যামেরার ছবি ব্যবহার করে পোকেমন ধরতে হবেশুরুটা দুই দশক আগেপোকেমন গো গেম সম্পর্কে জানার আগে পোকেমন কী, তা জানা দরকার। পোকেমনের ধারণা গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকেই প্রচলিত। পোকেমন একধরনের ভার্চ্যুয়াল প্রাণী। একে প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্যান্য পোকেমন ধরার কাজে কিংবা অন্যান্য ব্যবহারকারীর পোকেমনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিতে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি পোকেমন চরিত্রের আলাদা কিছু সুপারপাওয়ার থাকে, যেগুলো দিয়ে শত্রুকে ঘায়েল করা যায়। ব্যবহারকারীদের রুচির পার্থক্যের জন্য একেকজনের কাছে একেকটি চরিত্র জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র ‘পিকাচু’। ভিডিও গেম নির্মাতা নিনটেন্ডোর গেম কনসোলে প্রথম পোকেমনের অস্তিত্ব মেলে। এরপর একাধারে কার্ড, কার্টুন ছবি, চলচ্চিত্র ও কমিক বুকে জনপ্রিয়তা পায়। আর এখন পোকেমনের দেখা মিলবে হাতের মুঠোয়, পোকেমন গো গেমে। গত ২০ বছরে প্রায় ৭০০ পোকেমন চরিত্র দেখা গেছে, সেখান থেকে ১৫১টি চরিত্র এই গেমে যোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু চরিত্র নির্দিষ্ট এলাকার জন্য সীমাবদ্ধ। দেশ বা শহর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন কিছু পোকেমন খুঁজে পাওয়া যাবে।
যেভাবে খেলতে হবেগেমটিতে ভালো করার কৌশল হলো ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় যেতে হবে আর হাঁটার সময় আস্তে আস্তে হাঁটতে হবে, কখনো কখনো পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করার পর একটি এলাকায় নতুন পোকেমন তৈরি হয়। সেই সঙ্গে পোকেমন ধরার দক্ষতাও বেশ জরুরি, একটি নতুন পোকেবল পোকেমনের ওপরে প্রথমে ঘুরিয়ে তারপর ছুড়ে মারতে হয়। তবে কিছু পোকেমন খুব শক্তিশালী হয়। এদের যেমন ধরা কঠিন, তেমনি এরা বল ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম নয়। এ ক্ষেত্রে এদের সঙ্গে আগে লড়াই করে কিংবা কিছু খাবার দিয়ে পোষ মানিয়ে অধিগ্রহণ করা যেতে পারে। কোন পোকেমনটি বেশি শক্তিশালী, তা এর রং থেকে জানা সম্ভব, যেমন সবুজ পোকেমনের চেয়ে হলুদ পোকেমন বেশি শক্তিশালী, এরপর যথাক্রমে কমলা, লাল এভাবে। আর গেমে খুঁজে পাওয়া পোকেমনের ডিম ফুটানোর জন্য দুই থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটতে হতে পারে গেমারকে।
গেমটি খেলার জন্য পোকেজেম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সুবিধাসহ দুর্লভ প্রজাতির পোকেমন কেনার জন্য এই জেম খরচ করা যাবে। ১৪ হাজার ৫০০ পোকেজেমের জন্য মূল্য নির্ধারণ করেছে ৮০ পাউন্ড, যা গেমের সুবিধাদি কেনার জন্য আকাশচুম্বী। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, দীর্ঘ সময় গেম খেলার মাধ্যমে আস্তে আস্তে জেম সংগ্রহ করা সম্ভব। এ ছাড়া একই ধরনের পোকেমন যদি একাধিক থেকে থাকে, তবে সেগুলো বিক্রি করেও জেম অর্জন করা সম্ভব। গেমটি সম্পর্কে সব থেকে নেতিবাচক যে বিষয়টি এসেছে তা হলো, ফোনের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যায়, তাই গেমটি খেলতে হলে পাওয়ার ব্যাংক (অতিরিক্ত ব্যাটারি) সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন গেমাররা।
গেম নিয়ে বিতর্ক
গেমটি খেলার সময় নিজ নিজ এলাকায় পোকেমন ধরা যায়। গুগল ম্যাপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আপনার আশপাশে লুকিয়ে থাকা পোকেমন খুঁজে বের করতে হয় এই গেমে। অর্থাৎ ম্যাপ থেকে খুঁজে বের করতে হবে কোথায় পোকেমন আছে এবং হেঁটে গিয়ে অন্য কেউ নিজের করে নেওয়ার আগেই সেটি উদ্ধার করতে হবে। এ থেকে সহজেই অনুমেয়, গেমটি খেলার জন্য প্রচুর হাঁটার বিকল্প নেই। ফলে আগে যেখানে বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক দেখিয়ে চিকিৎসকেরা বেশি গেম খেলতে নিষেধ করতেন, সেখানে উল্টো তাঁরাই পরামর্শ দিচ্ছেন পোকেমন গো খেলার জন্য। সে জন্য সবাই অফিসে বা স্কুলে যাওয়ার সময়, রাস্তাঘাটে, বাসে, নদীর ধারে, বন-জঙ্গলে গিয়ে পর্যন্ত পোকেমন গো গেমটি খেলছেন পছন্দের পোকেমন ধরার জন্য আর এসব করতে গিয়ে বাধা-বিপত্তিও পোহাতে হচ্ছে ঢের। একদল দুষ্কৃতকারী ম্যাপ থেকে জেনে রাখছে কোনো দুর্গম এলাকায় পোকেমন রয়েছে, সেখানে অবস্থান নিয়ে কেউ তা খুঁজতে এলে মুঠোফোন ও টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার নজিরও পাওয়া গেছে, আর অতি উৎসাহী হয়ে গেমটি খেলার সময় সেতুর ওপর থেকে পড়ে গিয়ে এরই মধ্যে একজনের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে।
http://www.prothom-alo.com
https://web.facebook.com/yousuf7181/
Read More
12:41 AM 0

পেপ্যাল নিয়ে ফ্রিল্যান্সাররা কী ভাবছেন?

রাহিতুল ইসলাম | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ
      
অবশেষ বাংলাদেশে চালু হচ্ছে অনলাইন-ভিত্তিক অর্থ লেনদেনসেবা পেপ্যাল। পেপ্যালের সঙ্গে কিছুদিন আগে চুক্তি করেছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক। জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের পক্ষে উপমহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এ চুক্তিতে সই করেন। প্রথমে সোনালী ব্যাংকের পক্ষে খসড়া চুক্তিতে সই করে তা পাঠানো হয় পেপ্যালের সদর দপ্তরে। সেখান থেকে পেপ্যালের পক্ষে চুক্তিতে সই করা হয়েছে বলেও সোনালী ব্যাংক জানিয়েছে। এর ফলে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং কাজে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা। বাংলাদেশে পেপ্যাল চালু হওয়ার ব্যাপারে কথা বলেছেন কয়েকজন সফল ফ্রিল্যান্সার।
পেপ্যাল এলে ফ্রিল্যান্সারদের অর্জিত টাকা দেশে আনতে সুবিধা হবে l কৃতজ্ঞতা: লুমেক্স আইটি, ছবি: খালেদ সরকারদেশে অর্থ আনার একটি অতিরিক্ত মাধ্যম যোগ হবেএমরাজিনা ইসলামফ্রিল্যান্সার। বেসিসের আউটসোর্সিং পুরস্কারপ্রাপ্তপেপ্যাল আসছে, এমন খবর আমরা আগেও অনেকবার শুনেছি। কিন্তু এবার মোটামুটি নিশ্চিত হতে পেরেছি পেপ্যাল আসছে। এটি আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য খুবই আনন্দের সংবাদ। কারণ, টাকা আনার একটি অতিরিক্ত মাধ্যম আমরা পেতে যাচ্ছি। কিন্তু আমি জানি না বাংলাদেশে পেপ্যাল কেমন ফি কাটবে। আমি বর্তমানে পেওনিয়ার মাস্টার কার্ডে এবং ওয়্যার ট্রান্সফারের মাধ্যমে সরাসরি ব্যাংক হিসাবে টাকা আনছি। পেওনিয়ারের চার্জের চেয়ে যদি পেপ্যালের চার্জ বেশি হয়, তবে পেপ্যালে টাকা আনব না। চার্জ কম রাখলে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অনেক ভালো হবে। যেসব মাধ্যম আছে টাকা আনার, তার মধ্য থেকে পেপ্যালের পরিচিতি অনেক বেশি, এটি সব দেশে অ্যাকসেস আছে। তা ছাড়া অনলাইন কেনাকাটার জন্য পেপ্যাল খুবই ভালো একটি মাধ্যম হবে। খুব সহজেই কেনাকাটা করা যাবে। মাঝে আমি কিছুদিন একটা মার্কিন ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রির জন্য দিয়েছিলাম। সেখানে শিল্পীরা তাঁদের আঁকা ছবি বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু বিক্রির টাকা আনার একমাত্র মাধ্যম ছিল পেপ্যাল।
ই–কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য আশীর্বাদ
মাহফুজা সেলিম
ফ্রিল্যান্সার। বেসিসের আউটসোর্সিং পুরস্কারপ্রাপ্ত
পেপ্যাল একটি সহজ, নিরাপদ ও সর্বাধিক ব্যবহৃত অর্থ লেনদেনের মাধ্যম। অধিকাংশ বিদেশি ক্রেতা এতে লেনদেন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। যখনই আমরা জানাই যে আমাদের দেশে পেপ্যাল কাজ করে না, তখন তাঁরা পাশের দেশ বা অন্য কোথাও থেকে কাজটি করিয়ে নেন। এটি হয়তো তাঁর মনে একধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেখানে পেপ্যালের মতো একটি সাধারণ লেনদেনব্যবস্থা নেই, সেখানে কাজ করতে গিয়ে হয়তো নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। ক্লায়েন্টের সঙ্গে আমার চুক্তি হয়ে গেলেও তাঁকে আবার তৃতীয় একটি পেমেন্ট সিস্টেম খুঁজতে হয়, যেটিতে হয়তো ক্লায়েন্ট লেনদেন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।
আমার মনে হয়, পেপ্যাল এলে এই সমস্যাগুলো আর থাকবে না। দেশে প্রচুর ক্লায়েন্ট আসবেন, রেমিট্যান্স বাড়বে কয়েক গুণ। বর্তমানে আমরা যেসব লেনদেনমাধ্যম ব্যবহার করি, এগুলো তুলনামূলক ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। পেপ্যাল এলে এই সমস্যা দূর হবে। পেপ্যাল শুধু মুক্ত পেশাজীবীদের (ফ্রিল্যান্সার) জন্যই নয়, দেশের ই-কমার্স ও অনলাইন উদ্যোক্তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে।

এর-ওর কাছে যেতে হবে না
শাহরিনা ইয়াসমিন
ফ্রিল্যান্সার, বেসিসের আউটসোর্সিং পুরস্কারপ্রাপ্ত
পেপ্যাল সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয়। আন্তর্জাতিক বাজারে পেপ্যালের গুরুত্ব অনেক বেশি। বাংলাদেশে পেপ্যাল এলে শুধু ফ্রিল্যান্সাররা নন, আন্তর্জাতিক অনলাইন বাজার থেকে কেনাকাটা শুরু করে সবকিছুই সহজ হয়ে যাবে। অনলাইনে কোনো প্রশিক্ষণ নিতে গেলে পেপ্যালের দরকার হয়। প্রকল্প ব্যবস্থাপনার মতো প্রশিক্ষণ আন্তর্জাতিক কোনো ওয়েবসাইট থেকে নিতে হলে পেপ্যালের কোনো বিকল্প নেই। আমি যুক্তরাষ্ট্রে যখন থাকতাম, তখন পেপ্যাল ব্যবহার করেছি। আমার কাছে অনেকে যোগাযোগ করতেন প্রশিক্ষণের এই ফি দেওয়ার জন্য। অনেকে দেখা যায় শুধু পেপ্যাল বা এমন লেনদেনের মাধ্যমের জন্যই কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারছেন না। বাংলাদেশে পেপ্যাল এলে খুবই ভালো হবে বলে মনে করি। আমি এখন সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে অর্থ আনছি। তিন-চার বছর ধরে বেশ কটি ব্যাংক এই সুবিধা দিচ্ছে।

আর লজ্জা পেতে হবে না
ওবায়েদুল ইসলাম
আউটসোর্সিং প্রশিক্ষক
পেপ্যাল এলে সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা হলো নিজের একটা ঠিকানা থাকবে। এর-ওর কাছে গিয়ে বায়না ধরতে হবে না। বাইরের অনেক ই-কমার্স সাইট আছে, যেগুলোতে পেপ্যাল ছাড়া কোনো লেনদেন হয় না। ইবেসহ বিভিন্ন সাইটে শুধু পেপ্যাল দিয়েই লেনদেন করা সম্ভব। পেপ্যাল এলে এই কেনাকাটাগুলো অনেক সহজ হবে। বড় কথা হলো, বাইরের ক্লায়েন্টের কাছে লজ্জা পেতে হবে না। কারণ, তাঁরা চান পেপ্যালে লেনদেন করতে। এখন ভয় হচ্ছে, কেমন চার্জ দিতে হবে? কী শর্ত আর কোন পরিমাণ অর্থ লেনদেন করতে পারব, এটা আসল বিষয়। লেনদেনে কোনো লিমিট দিয়ে দিলে সেটার খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। আমার চাওয়া হলো, সরকার এই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে যেন কাজ করে এবং ভ্যাটের পরিমাণ যেন খুব বেশি না হয়।

কেনাকাটা সহজ হবে
রাসেল আহমেদ
ফ্রিল্যান্সার, প্রধান কর্মকর্তা, আর আর ফাউন্ডেশন
পেপ্যাল বাংলাদেশে এলে লেনদেন অনেক সহজ হবে। আমি এখন সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ আনছি। এতে অবশ্য ফি একটু বেশি কাটছে। কিন্তু পেপ্যাল এলে অর্থ সরাসরি পাব। আর চার্জও তুলনামূলকভাবে কম হবে। বাইরের গ্রাহকেরা পেপ্যালে পেমেন্ট করতে চান। এই সমস্যাটি আর থাকবে না। তা ছাড়া এতে স্থানীয় ই-কমার্স সাইটগুলো লাভবান হবে। পেপ্যালের মাধ্যমে কেনাকাটাও সহজ হয়ে যাবে। পেপ্যাল ব্যাংকের মাধ্যমে আসছে, এখন দেখার ব্যাপার কী কী শর্ত দেয়।

পেপ্যাল নেই এমন উত্তরে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়
শাহ ইমরাউল কায়ীশ
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টেকনো বিডি ওয়েব সলিউশন্স
পেপ্যাল বাংলাদেশে এলে সুবিধা অনেক। আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজ হবে। অনেক সাইট আছে, যেখানে পেপ্যাল ছাড়া কোনো কিছু কাজ করে না। একটা বিষয় দেখা যায় যে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা কিছু কিনতে চাইলে পেপ্যালের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করতে চান। পেপ্যাল নেই এমন উত্তরে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। পেপ্যালের নেটওয়ার্ক অনেক বড়। বাইরে থেকে খুব সহজেই পছন্দের পণ্য কেনা যাবে পেপ্যাল এলে। এখন দেখার বিষয় পেপ্যাল বাংলাদেশে কীভাবে আসে। তাদের মডেলটি কেমন হবে বাংলাদেশের জন্য।

এখন যে মাধ্যমে অর্থ আসে 
*  সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে (ওয়্যার ট্রান্সফার)
* পেওনিয়ার (মাস্টার কার্ড)
http://www.prothom-alo.com
https://web.facebook.com/yousuf7181/
Read More
12:40 AM 0

বন্ধুত্বের কীর্তি

আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ
কারও প্রয়োজনীয়তা থেকে, কারও আবার ভালো লাগা থেকে কিংবা ভিন্ন কিছু থেকেই হয়তো বন্ধু বন্ধুর সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন প্রতিষ্ঠান, যা বর্তমানে পৃথিবীর সফল প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি। এ ধরনের কয়েকটি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরুর গল্প শোনা যাক।
.অ্যাপল১৯৭০-এর গ্রীষ্মে চাকরি করতে গিয়ে বন্ধুত্ব হয় দুই স্টিভের। স্টিভ ওজনিয়াক ব্যস্ত কম্পিউটার তৈরিতে। স্টিভ জবস তখন ওজনিয়াককে জানান এটি বিক্রির সুযোগ রয়েছে। তাঁরা পেরেছিলেনও বটে। এরপর ভাবা শুরু করেন কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেন এবং পৃথিবীতে পরিবর্তন আনা যায়। ছয় বছর পর ১৯৭৬ সালের ১ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপল কম্পিউটার ইনকরপোরেটেড।
.ইউটিউব২০০২ সালের অক্টোবরে মার্কিন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইবে পেপ্যাল কিনে নিলে বাংলাদেশি-জার্মান বংশোদ্ভূত জাভেদ করিমের সঙ্গে চাকরি হারান চ্যাড হার্লে ও স্টিভেন চ্যান। এরপর এই তিন বন্ধু ভাবতে থাকেন কী করা যায়। ২০০৫-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু করেন তাঁদের নতুন উদ্যোগ ইউটিউব।
.গুগলল্যারি পেইজ এবং সের্গেই ব্রিন। এ দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হুট করেই গড়ে ওঠেনি। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছিলেন তাঁরা। আর সে জন্য নেহাত গবেষণা প্রকল্প হিসেবে কাজ শুরু করেন। আর তা থেকেই ১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুই বন্ধু একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে গুগলের প্রতিষ্ঠা করেন।
.এইচপি
স্ট্যানফোর্ডের প্রকৌশল প্রোগ্রামিংয়ের ছাত্র ছিলেন উইলিয়াম রেডিংটন হিউলেট এবং ডেভিড প্যাকার্ড। স্নাতক করার পর দুই সপ্তাহের ভ্রমণে গেলে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গাঢ় হয়। তারপর ১৯৩৯ সালের ১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আল্টোর গ্যারেজে এ দুজন প্রতিষ্ঠা করেন তাঁদের কোম্পানি এইচপি।
.মাইক্রোসফট
লেকসাইড প্রাইভেট স্কুলেই দুজনের পরিচয়। এরপর সম্পর্ক গড়ায় বন্ধুত্বে। বিল গেটস ও পল অ্যালেন—দুজনের মধ্যেই ছিল কম্পিউটারের প্রতি ভালো লাগা। আর তা থেকেই দুই বন্ধু মিলে ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল নিউ মেক্সিকোর অ্যালবাকের্কিতে প্রতিষ্ঠা করেন মাইক্রোসফট।
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার
http://www.prothom-alo.com
https://web.facebook.com/yousuf7181/
Read More
12:39 AM 0

ওয়েবের ২৫ বছর

আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ
সার্নের কার্যালয়ে নিজের ব্যবহৃত কম্পিউটারের সামনে স্যার টিম বার্নার্স–লিপ্রথম ওয়েবসাইট চালুর ২৫ বছর পূর্ণ হয় চলতি বছরের ৬ আগস্ট। ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী স্যার টিম বার্নার্স-লির হাতে ২৫ বছর আগে তৈরি সাদামাটা নকশার প্রথম সেই ওয়েবসাইটটি ছিল নতুন যুগের শুরু। এই ২৫ বছরের ওয়েবের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো।
১২ মার্চ ১৯৮৯: ইউরোপীয় পারমাণবিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্নে কর্মরত অবস্থায় ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী স্যার টিম বার্নার্স-লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের ধারণা উপস্থাপন করেন তাঁর ‘ইনফরমেশনাল ম্যানেজমেন্ট প্রপোজাল’ গবেষণাপত্রে। তাঁর লেখা প্রোগ্রামিং সংকেত সবার জন্য প্রকাশ করেন ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর।
৬ আগস্ট ১৯৯১: সার্নের ডোমেইন নেমে বিশ্বের প্রথম ওয়েবসাইট চালু করেন টিম বার্নার্স-লি।
১৯৯৩: মার্ক অ্যান্ডারসনের নেতৃত্বে ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েসের এক দল গবেষক ওয়েবসাইট দেখার সফটওয়্যার হিসেবে প্রথম মোজাইক তৈরি করেন। এই সফটওয়্যারের জন্যই সবার মধ্যে ওয়েবের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। মোজাইকের ওপর ভিত্তি করেই ১৯৯৪ সালে তৈরি হয় আরেক বাণিজ্য-সফল ব্রাউজার নেটস্ক্যাপ।
১৯৯৪
* চীনে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়। সেই তখন থেকেই বিষয়বস্তুর ওপর তাদের নজরদারির শুরু।
* যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট চালু হয়।
১৯৯৫: উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের জন্য ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজার উন্মোচন করে মাইক্রোসফট। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে নেটস্ক্যাপের বিদায়। চালু হয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইবে।
১৯৯৬: ফিনল্যান্ডভিত্তিক মোবাইল ফোন নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান নকিয়া ইন্টারনেট সংযোগসহ প্রথম মুঠোফোন বাজারে ছাড়ে।
১৯৯৮
* যাত্রা শুরু করে গুগল। সার্চ ইঞ্জিনের লড়াইয়ে দ্রুত এগিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি।
* ওয়েব ডোমেইন সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র সরকার থেকে ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাপ্লাইড নেমে অ্যান্ড নার্ভাস (আইমান) নামের প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
২০০০: বিশ্বব্যাপী লাখো কম্পিউটারে ‘আই লাভ ইউ’ নামের ইন্টারনেট ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে কোটি কোটি ডলারের ক্ষতি হয়। সে থেকেই ইন্টারনেটে নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
২০০১: মার্কিন আদালতের আদেশে অনলাইনে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগে গান ভাগাভাগি করার সেবা ন্যাপস্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২০০৫: ইন্টারনেটে যুক্ত মানুষের সংখ্যা ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যায়।
২০০৭: অনলাইনে প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করে এস্তোনিয়া।
২০১২
* ই-কমার্স লেনদেনের পরিমাণ এক লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।
* সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০ কোটিতে পৌঁছায়।
* ইন্টারনেটের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বেশি এমন অভিযোগ এনে চুক্তিপত্রে সই করে জাতিসংঘের ৮৯টি সদস্যদেশ। যুক্তরাষ্ট্রসহ ৫৫টি দেশ তা প্রত্যাখ্যান করে। প্রত্যাখ্যানের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, এতে ইন্টারনেটের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বেড়ে যাবে।
২০১৩: বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ২৭০ কোটি মানুষ ইন্টারনেটে যুক্ত হয়। ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষার তালিকায় ইংরেজিকে ছাড়িয়ে চায়নিজ ওপরে উঠে আসে।
২০১৪: ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৪০ শতাংশ জানায়, তাদের ভালোবাসার সম্পর্কে ইন্টারনেটের প্রভাব গুরুতর।
সূত্র: এএফপি
http://www.prothom-alo.com/
https://web.facebook.com/yousuf7181/
Read More

Post Top Ad