ব রেকর্ড ভেঙে পোকেমন গো
আপডেট: ০০:১১, জুলাই ১৮, ২০১৬
| প্রিন্ট সংস্করণ
|
টেম্পল
রান, অ্যাংরি বার্ড, ক্যানডি ক্রাশ কিংবা ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানসের মতো
জনপ্রিয় সব গেমের রেকর্ড ভেঙেছে পোকেমন গো। ৬ জুলাই অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস
অপারেটিং সিস্টেমের জন্য উন্মুক্ত করার পর তিন দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে
সাড়ে ৫ শতাংশ অ্যান্ড্রয়েডে স্মার্টফোনে গেমটি ইনস্টল করা হয়েছে। ইনস্টল না
করতে পেরে ভিন্নপথে খেলেছেন আরও ৩ শতাংশ ব্যবহারকারী। যাঁরা ইনস্টল
করেছেন, তাঁদের ৬০ শতাংশ প্রতিদিন গড়ে ৪৩ মিনিট গেমটি খেলছেন। সিমিলার
ওয়েবের এই তথ্য থেকেই পোকেমন গো গেমের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা
পাওয়া যায়।
ভিডিও গেম নির্মাতা নিনটেনডোর সঙ্গে সফটওয়্যার ডেভেলপার
প্রতিষ্ঠান নিয়ানটিক আর দ্য পোকেমন কোম্পানির প্রকাশনায় পোকেমন গো গেমটি
বিনা মূল্যে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ থেকেই খেলা যাবে। ৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে
উন্মুক্ত করা হলেও ইউরোপের বাজারে গেমটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়। ১৩
জুলাই জার্মানিতে; ১৪ জুলাই যুক্তরাজ্যে; স্পেন পর্তুগাল ও ইতালিতে ১৫
জুলাই এবং বাকি দেশগুলোতে ১৬ জুলাই বাজারে আসে এটি। বাজারে আসার পর
যুক্তরাজ্যের অ্যাপ মার্কেটেও বেশ পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে অবশ্য একটি বড়
অংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গেমাররা ভিপিএন ব্যবহার করে কিংবা নিজের
ফোনের অ্যাপ স্টোরের ঠিকানা পরিবর্তন করে যুক্তরাজ্যের অ্যাপ স্টোর থেকে
ডাউনলোড করেছেন।
অর্থনৈতিক দিক থেকে ব্যাপক সফলতার মুখ দেখেছে গেমের
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। বাজারে উন্মুক্ত করার পাঁচ দিনের মধ্যে নিনটেন্ডোর
বাজারদর ৯০০ কোটি ডলার বেড়ে গেছে।
শুরুটা দুই দশক আগেপোকেমন
গো গেম সম্পর্কে জানার আগে পোকেমন কী, তা জানা দরকার। পোকেমনের ধারণা গত
শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকেই প্রচলিত। পোকেমন একধরনের ভার্চ্যুয়াল প্রাণী।
একে প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্যান্য পোকেমন ধরার কাজে কিংবা অন্যান্য ব্যবহারকারীর
পোকেমনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিতে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি পোকেমন চরিত্রের
আলাদা কিছু সুপারপাওয়ার থাকে, যেগুলো দিয়ে শত্রুকে ঘায়েল করা যায়।
ব্যবহারকারীদের রুচির পার্থক্যের জন্য একেকজনের কাছে একেকটি চরিত্র
জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র ‘পিকাচু’। ভিডিও গেম নির্মাতা
নিনটেন্ডোর গেম কনসোলে প্রথম পোকেমনের অস্তিত্ব মেলে। এরপর একাধারে কার্ড,
কার্টুন ছবি, চলচ্চিত্র ও কমিক বুকে জনপ্রিয়তা পায়। আর এখন পোকেমনের দেখা
মিলবে হাতের মুঠোয়, পোকেমন গো গেমে। গত ২০ বছরে প্রায় ৭০০ পোকেমন চরিত্র
দেখা গেছে, সেখান থেকে ১৫১টি চরিত্র এই গেমে যোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু
চরিত্র নির্দিষ্ট এলাকার জন্য সীমাবদ্ধ। দেশ বা শহর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে
নতুন কিছু পোকেমন খুঁজে পাওয়া যাবে।যেভাবে খেলতে হবেগেমটিতে ভালো করার কৌশল হলো ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় যেতে হবে আর হাঁটার সময় আস্তে আস্তে হাঁটতে হবে, কখনো কখনো পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করার পর একটি এলাকায় নতুন পোকেমন তৈরি হয়। সেই সঙ্গে পোকেমন ধরার দক্ষতাও বেশ জরুরি, একটি নতুন পোকেবল পোকেমনের ওপরে প্রথমে ঘুরিয়ে তারপর ছুড়ে মারতে হয়। তবে কিছু পোকেমন খুব শক্তিশালী হয়। এদের যেমন ধরা কঠিন, তেমনি এরা বল ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম নয়। এ ক্ষেত্রে এদের সঙ্গে আগে লড়াই করে কিংবা কিছু খাবার দিয়ে পোষ মানিয়ে অধিগ্রহণ করা যেতে পারে। কোন পোকেমনটি বেশি শক্তিশালী, তা এর রং থেকে জানা সম্ভব, যেমন সবুজ পোকেমনের চেয়ে হলুদ পোকেমন বেশি শক্তিশালী, এরপর যথাক্রমে কমলা, লাল এভাবে। আর গেমে খুঁজে পাওয়া পোকেমনের ডিম ফুটানোর জন্য দুই থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটতে হতে পারে গেমারকে।
গেমটি খেলার জন্য পোকেজেম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন
সুবিধাসহ দুর্লভ প্রজাতির পোকেমন কেনার জন্য এই জেম খরচ করা যাবে। ১৪ হাজার
৫০০ পোকেজেমের জন্য মূল্য নির্ধারণ করেছে ৮০ পাউন্ড, যা গেমের সুবিধাদি
কেনার জন্য আকাশচুম্বী। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, দীর্ঘ সময় গেম খেলার
মাধ্যমে আস্তে আস্তে জেম সংগ্রহ করা সম্ভব। এ ছাড়া একই ধরনের পোকেমন যদি
একাধিক থেকে থাকে, তবে সেগুলো বিক্রি করেও জেম অর্জন করা সম্ভব। গেমটি
সম্পর্কে সব থেকে নেতিবাচক যে বিষয়টি এসেছে তা হলো, ফোনের ব্যাটারি দ্রুত
শেষ হয়ে যায়, তাই গেমটি খেলতে হলে পাওয়ার ব্যাংক (অতিরিক্ত ব্যাটারি) সঙ্গে
রাখার পরামর্শ দিয়েছেন গেমাররা।
গেম নিয়ে বিতর্ক
গেমটি খেলার সময় নিজ নিজ এলাকায় পোকেমন ধরা যায়। গুগল
ম্যাপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আপনার আশপাশে লুকিয়ে থাকা পোকেমন খুঁজে বের করতে
হয় এই গেমে। অর্থাৎ ম্যাপ থেকে খুঁজে বের করতে হবে কোথায় পোকেমন আছে এবং
হেঁটে গিয়ে অন্য কেউ নিজের করে নেওয়ার আগেই সেটি উদ্ধার করতে হবে। এ থেকে
সহজেই অনুমেয়, গেমটি খেলার জন্য প্রচুর হাঁটার বিকল্প নেই। ফলে আগে যেখানে
বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক দেখিয়ে চিকিৎসকেরা বেশি গেম খেলতে নিষেধ করতেন, সেখানে
উল্টো তাঁরাই পরামর্শ দিচ্ছেন পোকেমন গো খেলার জন্য। সে জন্য সবাই অফিসে
বা স্কুলে যাওয়ার সময়, রাস্তাঘাটে, বাসে, নদীর ধারে, বন-জঙ্গলে গিয়ে
পর্যন্ত পোকেমন গো গেমটি খেলছেন পছন্দের পোকেমন ধরার জন্য আর এসব করতে গিয়ে
বাধা-বিপত্তিও পোহাতে হচ্ছে ঢের। একদল দুষ্কৃতকারী ম্যাপ থেকে জেনে রাখছে
কোনো দুর্গম এলাকায় পোকেমন রয়েছে, সেখানে অবস্থান নিয়ে কেউ তা খুঁজতে এলে
মুঠোফোন ও টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার নজিরও পাওয়া গেছে, আর অতি উৎসাহী হয়ে
গেমটি খেলার সময় সেতুর ওপর থেকে পড়ে গিয়ে এরই মধ্যে একজনের মৃত্যু পর্যন্ত
হয়েছে।
http://www.prothom-alo.com
https://web.facebook.com/yousuf7181/
No comments:
Post a Comment