পিতা-মাতাই সন্তানের শ্রেষ্ঠ বন্ধু - Read Your Solution Of IT

You can learn Graphics right HERE

ad

Hot

Post Top Ad

Tuesday, August 30, 2016

পিতা-মাতাই সন্তানের শ্রেষ্ঠ বন্ধু

পিতা-মাতাই সন্তানের শ্রেষ্ঠ বন্ধু

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ

বন্ধুত্ব হলো ভালোবাসার সহজ-সরল নিঃস্বার্থ ও নিঃশর্ত রূপ। সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ এবং সবচেয়ে মূল্যবান হলো বন্ধুত্ব। বন্ধু ছাড়া সংসার অচল। আল্লাহ স্বয়ং বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন হজরত ইব্রাহীম (আ.)-কে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ও পরম বন্ধুরূপে বরণ করেছেন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে এবং সব মুমিনকে বন্ধুত্বের মর্যাদায় সম্মানিত করেছেন। কোরআন করিমে বলেছেন: ‘যারা ইমান আনল, আল্লাহ তাদের বন্ধু হলেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৭)।
বন্ধু শব্দটির মানে হলো যার সঙ্গে বন্ধন রয়েছে। আত্মিক বন্ধন থাকলেই সে বন্ধু হয়। পিতা-মাতা, ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে রয়েছে রক্তের বন্ধন। মুমিনের সঙ্গে আছে ইমানের বন্ধন। সব মানুষের সঙ্গে আছে মানবতার বন্ধন। সব সৃষ্টির সঙ্গে আছে আদি সৃষ্টির বন্ধন।
বন্ধুত্বের শব্দমালা
বাংলায় বন্ধু শব্দের সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ হলো বন্ধুয়া, বান্ধব, সুহৃদ, হিতৈষী, কল্যাণকামী, স্বজন, প্রণয়ী, প্রিয়জন; বন্ধু শব্দের স্ত্রী হলো বন্ধুনী, বান্ধবী। ফার্সিতে দোস্ত; উর্দুতে ইয়ার; হিন্দিতে মিত্র বা সখা; এসব শব্দ বাংলায়ও ব্যবহৃত হয়। বন্ধু শব্দের আরবি হলো রফিক, ওলি, সাদিক, খলিল, হাবিব ইত্যাদি। ‘রফিক’ শব্দটি হাদিসে এসেছে। নবীজি (সা.) বলেন: ‘প্রত্যেক নবীরই জান্নাতে বন্ধু (রফিক) থাকবে, জান্নাতে আমার রফিক (বন্ধু) হবে উসমান ইবনে আফফান (রা.)।’ (বুখারি)। ‘ওলি’ হলো সেই বন্ধু, যার সঙ্গে অভিভাবকত্ব ও দায়িত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান।
সাদিক শব্দটি ‘সিদক’ শব্দ থেকে উৎপন্ন, সিদক মানে সত্য ও সত্যতা। বন্ধুত্বের সম্পর্ক পরিপূর্ণ বিশ্বাসের; তার সঙ্গে মিথ্যা, ছলনা ও প্রতারণা অচিন্তনীয়; তাই প্রকৃত বন্ধুকে সাদিক বলা হয়। এই সাদিক থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় হলো সিদ্দীক; যে নিজের বন্ধুকে শর্তহীনভাবে বিশ্বাস করে। মহানবী (সা.)-কে নিরঙ্কুশ বিশ্বাসের কারণে হজরত আবু বকর (রা.) হয়েছেন ‘সিদ্দিক আকবার’ বা সবচেয়ে বড় বিশ্বাসী ব্যক্তি। সিদ্দিক শব্দের স্ত্রীরূপ হলো ‘সিদ্দিকা’। কোরআন করিমে হজরত মরিয়ম (আ.)-কে ‘সিদ্দিকা’ বলা হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে নবী-পত্নী মহীয়সী মা আয়েশা (রা.) ‘সিদ্দিকা’ অভিধায় ভূষিত হয়েছেন।
খলিল শব্দটি ‘খলল’ ধাতু থেকে নির্গত; খলল মানে হলো মিশে যাওয়া, দ্রবণ বা মিশ্রণ। বন্ধু যখন বন্ধুর বন্ধুত্বে লীন ও একাকার হয়ে যায় এবং সেই বন্ধুত্ব কখনো বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয়; তখন তাকে খলিল বলা হয়। যেমন, আল্লাহ তাআলা ইব্রাহিম (আ.)-কে ‘খলিল’ একনিষ্ঠ বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আর ধর্মে সে অপেক্ষা কে উত্তম! যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং একনিষ্ঠভাবে ইব্রাহিম (আ.)-এর ধর্মাদর্শ অনুসরণ করে? আর আল্লাহ ইব্রাহিম (আ.)-কে বন্ধুরূপে বরণ করেছেন। (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ১২৫)।
হাবিব শব্দটি ‘হাব্ব’ অথবা ‘হুব্ব’ শব্দ থেকে উদ্গত। ‘হুব্ব’ মানে ভালোবাসা, প্রেমপ্রীতি; তথা বন্ধুত্বের চরম ও পরম পর্যায়। ‘হাব্ব’ অর্থ বীজ বা শস্যদানা। আদি বীজ থেকে অঙ্কুরিত ভালোবাসা বা বন্ধুত্বকে ‘মহব্বত’ বলা হয়। যে বন্ধুর বন্ধুত্ব দ্বিপত্র বীজের উদ্গমের আগে অঙ্কুরেই সযত্নে সংরক্ষিত থাকে এবং কালক্রমে পর্যায়ক্রমিকভাবে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে পত্রপল্লবে ফুলে-ফলে সুশোভিত হতে থাকে; যা আদিতেও একীভূত ছিল এবং অনন্তকাল অবিচ্ছিন্ন থাকবে, সেই পরম বন্ধুকে বলা হয় ‘হাবিব’। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন আল্লাহর প্রিয় ‘হাবিব’। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন: ‘আমি আল্লাহর হাবিব (প্রিয়তম বন্ধু); কিন্তু গৌরব করছি না।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
বন্ধুত্বের নানা দিক
সৎকর্মের জন্য সজ্জনদের বন্ধুত্ব, যথাযথ পাত্রে বন্ধুত্ব, বন্ধুত্বের তাগিদে সৎকাজ করা দুনিয়ায় সফলতার সোপান ও আখেরাতে মুক্তির পথ ও পাথেয়। অপাত্রে বন্ধুত্ব, অবৈধ কাজের জন্য বন্ধুত্ব, অন্যায় ও অসৎ সঙ্গীদের মিথ্যা প্রতারণামূলক বন্ধুত্বের ফাঁদ ইহজগতে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা ও পরকালে দোজখের দ্বার। সেদিন রোজ কিয়ামতে পাপীরা বলবে, ‘হায়, দুর্ভোগ আমার! যদি আমি অমুককে বন্ধু না বানাতাম; আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার কাছে উপদেশ পৌঁছার পর। শয়তান তো মানুষের জন্য মহা প্রতারক।’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ২৮)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আমি তোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি তা হতে তারা তোমার পদস্খলন ঘটানোর চেষ্টা প্রায় চূড়ান্ত করেছিল; যাতে তুমি আমার সম্বন্ধে এর বিপরীত মিথ্যা রচনা করো; তবেই তারা তোমাকে নিশ্চিত বন্ধুরূপে গ্রহণ করত।’ (সুরা-১৭ ইসরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৭৩)। পথভ্রষ্ট বন্ধুরা যারা অন্যায় কাজে দুনিয়ায় একে অন্যের সহযোগিতা করেছিল এবং এ কারণে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের, বিশ্বস্ততা ও নির্ভরতার চরম পরাকাষ্ঠাও দেখিয়েছিল; তারা পরকালে একে অপরের চরম শত্রুতে পরিণত হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা তো তাদের অজ্ঞাতসারে আকস্মিকভাবে কিয়ামত আসার অপেক্ষা করছে। সেদিন বন্ধুরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে; তবে মুত্তাকি পরহেজগারগণ নয়।’ (সুরা-৪৩ যুখরুফ, আয়াত: ৬৬-৬৭)। সৎকর্মশীল নেককার লোকেরা ইহজগতে যেমন ভালো বন্ধু; একে অন্যকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করেন এবং মন্দ কাজ থেকে নিরুৎসাহিত করেন; অনুরূপ রোজ কিয়ামতে কঠিন হাশরে বিচারের দিনেও তাঁরা একে অন্যের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ ও ক্ষমাপ্রার্থনা করবেন; যা তাঁদের উভয়ের নাজাতের অছিলা হবে।
কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে আল্লাহর আরশের ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না। সেদিন আরশের ছায়ার নিচে যে সাত প্রকার লোক স্থান পাবেন, তাঁদের এক প্রকার হলন ওই সব লোক, যাঁরা বন্ধুত্ব করে একে অন্যকে ভালোবাসেন আল্লাহর জন্য। হাদিস শরিফে আছে: ‘মানুষ চেনা যায় তার বন্ধুর মাধ্যমে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
সন্তানের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ
পিতা-মাতা শুধু সন্তানের অভিভাবকই নন; তাঁরা সন্তানের সবচেয়ে আপন ও সবচেয়ে নিকটজন। তাই পিতা-মাতাকে সন্তানের সঙ্গে স্নেহবৎসল আচরণের পাশাপাশি বন্ধুসুলভ আচরণও করতে হবে। যাতে সন্তান তাঁদের শ্রদ্ধা করার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুও ভাবতে পারে। পিতা-মাতা সন্তানকে শাসন করার সঙ্গে বন্ধুভাবও বজায় রাখবেন, যাতে সন্তান নির্ভয়ে প্রাণ খুলে মনের কথা তাঁদের কাছে ব্যক্ত করতে পারে; অকপটে প্রাণ খুলে সবকিছু বলতে পারে। না হলে তাদের সুকুমারবৃত্তি ও মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হবে এবং তারা অসৎ বন্ধুর পাল্লায় পড়ে বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব
বন্ধুত্বের পর্যায়ক্রম: বন্ধুত্ব আল্লাহর সঙ্গে; এই বন্ধুত্ব হবে ফরজ-ওয়াজিব আদায় ও হারাম-হালাল মেনে কোরআন তিলাওয়াত ও তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে। বন্ধুত্ব প্রিয় নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে; এই বন্ধুত্ব হবে আদর্শ সুন্নতি জীবন যাপন ও অত্যধিকসংখ্যক দরুদ শরিফ পাঠের মাধ্যমে। বন্ধুত্ব পিতা-মাতার সঙ্গে; সদাচার, আনুগত্য ও খেদমতের মাধ্যমে। বন্ধুত্ব স্বামী-স্ত্রীর মাঝে; বিশ্বস্ততা, দায়িত্ববোধের মাধ্যমে। বন্ধুত্ব ভাইবোনের সঙ্গে; সদ্ব্যবহার, মমত্ব ও নিঃস্বার্থতার মাধ্যমে।
বন্ধুত্ব ছেলেমেয়ে, সন্তানসন্ততির সঙ্গে; বন্ধুসুলভ আচরণ, কর্তব্যপরায়ণতা ও স্নেহমমতার মাধ্যমে। বন্ধুত্ব মুমিন মুসলিমের সঙ্গে; নেক আমলে সহযোগিতা তথা সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের মাধ্যমে। বন্ধুত্ব আত্মীয়স্বজন, আপনজন, নিকটতম পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে; সাহায্য-সহযোগিতা ও সদুপদেশের মাধ্যমে। বন্ধুত্ব সব মানুষ ও সৃষ্টিকুলের সঙ্গে; কল্যাণকামিতা ও সুরক্ষার মাধ্যমে।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com

https://web.facebook.com/yousuf7181/ 

No comments:

Post Top Ad