নারী ও শিশুর হজের বিধান
আপডেট: ০০:২২, আগস্ট ২৬, ২০১৬
| প্রিন্ট সংস্করণ
|
ইসলাম
প্রকৃতির ধর্ম। ইসলাম সাম্য ও মৈত্রীর ধর্ম। ইসলামের বিধান নারী, পুরুষ,
শিশু, বালক, কিশোর, তরুণ, যুবা, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ সবার জন্য; যার যার সামর্থ্য
অনুযায়ী করণীয় নির্দিষ্ট করেছে। নারীরা মানবজাতির প্রায় অর্ধেক অংশ; নরদের
প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিশু। নারী ও শিশুদের ইবাদতের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে
ইসলামি বিধানে। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় আমি ব্যর্থ করি না কোনো আমলকারীর
কর্ম, হোক সে পুরুষ বা নারী। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯৫)। যে সৎকর্ম
করবে, সে পুরুষ বা নারী যদি সে বিশ্বাসী হয়, তবে আমি তাকে উত্তম জীবন দান
করব। (সুরা নহল, আয়াত: ৯৭)। আর যে সৎকর্ম করবে, সে পুরুষ বা নারী যদি সে
বিশ্বাসী হয়, তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুরা মুমিন, আয়াত: ৪০)।
নারীদের হজনারীরা হজের যাবতীয় কাজ পুরুষের মতো একইভাবে আদায় করবেন; কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন: ১. উচ্চ আওয়াজে তালবিয়াহ পড়বেন না। ২. তাওয়াফের সময় রমল করবেন না। ৩. সায়ির সময় দৌড়াবেন না। ৪. মাথার চুল মুড়াবেন না, বরং চুলের আগার কিছু অংশ কাটবেন। ৫. সেলাই করা স্বাভাবিক কাপড় পরবেন। ৬. ইহরাম অবস্থায় হায়েজ হলে গোসল করে তাওয়াফ ছাড়া হজের অন্যান্য কাজ আদায় করবেন। তবে হায়েজ পর্ব শেষ হলে তাওয়াফ সম্পন্ন করতে হবে। ৭. ইহরাম অবস্থায় চেহারা খোলা রাখতে হয়।
নারীদের হজনারীরা হজের যাবতীয় কাজ পুরুষের মতো একইভাবে আদায় করবেন; কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন: ১. উচ্চ আওয়াজে তালবিয়াহ পড়বেন না। ২. তাওয়াফের সময় রমল করবেন না। ৩. সায়ির সময় দৌড়াবেন না। ৪. মাথার চুল মুড়াবেন না, বরং চুলের আগার কিছু অংশ কাটবেন। ৫. সেলাই করা স্বাভাবিক কাপড় পরবেন। ৬. ইহরাম অবস্থায় হায়েজ হলে গোসল করে তাওয়াফ ছাড়া হজের অন্যান্য কাজ আদায় করবেন। তবে হায়েজ পর্ব শেষ হলে তাওয়াফ সম্পন্ন করতে হবে। ৭. ইহরাম অবস্থায় চেহারা খোলা রাখতে হয়।
মসজিদে নববিতে পুরুষ-মহিলা একত্রে থাকতে পারবেন না।
নারীদের বসার, নামাজের ও ইবাদতের জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থা আছে। মক্কা
মুকাররমায় কাবা শরিফে পুরুষ-নারী একত্রে থাকতে বা একত্রে বসতে অসুবিধা
নেই। কিন্তু নামাজের আগে নারীদের উঠিয়ে দিয়ে তাঁদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে
পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ততক্ষণে নারীদের জন্য সংরক্ষিত স্থান পূর্ণ হয়ে যাওয়ায়
নারীদের নামাজে অংশগ্রহণ করতে বিশেষ অসুবিধা হয়ে থাকে। সে জন্য আগে থেকেই
নারীরা তাঁদের নির্দিষ্ট স্থানে বসার চেষ্টা করবেন।
হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় করণীয়
হায়েজ (ঋতুস্রাব) ও নেফাসের (প্রসবোত্তর স্রাব)সময় মসজিদুল
হারাম শরিফে প্রবেশ ও তাওয়াফ করা যায় না, নামাজ পড়তে বা কোরআন শরিফ
তিলাওয়াত করতে পারবেন না এবং উচ্চ স্বরে তালবিয়া পড়বেন না। কিন্তু ইহরাম
বাঁধা ও অন্যান্য দোয়া পড়া যায়। হায়েজ ও নেফাসের সময় তাওয়াফে কুদুম না করতে
পারলে তা মাফ হয়ে যাবে, কিন্তু হজের পর একটা ওমরাহ করতে হবে। হায়েজ ও
নেফাসের সময় অকুফে আরাফাত ও অকুফে মুজদালিফা করতে পারবেন, কঙ্কর মারতে
পারবেন, কিন্তু তাওয়াফে জিয়ারত হায়েজের পরে করবেন। ফরজ তাওয়াফ মাফ নেই।
অবশ্য বিদায়ী তাওয়াফ হায়েজ ও নেফাসের ওজরে না করতে পারলে এবং সময় না পেলে
এর জন্য কাফফারা দিতে হবে না; দূর থেকে বিদায় নেওয়া যাবে। কোনো নারী ইচ্ছা
করলে হজের কার্যাবলি সম্পাদনের সুবিধার্থে হজ চলাকালীন ওষুধ বা বড়ি খেয়ে
সাময়িকভাবে মাসিক বন্ধ রাখতে পারেন।
শিশুদের হজ
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় শিশু বলতে বোঝানো হয়
অপ্রাপ্তবয়স্ক তথা নাবালক অর্থাৎ যে সাবালকত্ব অর্জন করেনি। বাংলাদেশের
পরিবেশে মেয়েশিশুরা ১১ থেকে ১২ বছরে এবং ছেলেশিশুরা ১৩ থেকে ১৪ বছরে সাবালক
হয়। এই সময়ে তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয়।
এসব পরিবর্তন বিজ্ঞ অভিভাবক বুঝতে পারেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের ওপর হজ
ফরজ নয়। তবে কেউ হজ করলে তার নফল হজ আদায় হবে। হজ আদায়কালে ছেলেশিশুদের
পুরুষদের মতো ইহরাম পরতে হবে, মেয়েশিশুরা নারীদের মতো স্বাভাবিক পোশাকেই
ইহরামের নিয়ত করবে। নিয়ত তালবিয়া ইত্যাদি বলতে না পারলে অভিভাবক তার পক্ষ
থেকে আদায় করবেন। আর যদি সে নিজে হজের কার্যাদি পালনে সক্ষম হয়, তো নিজেই
করবে। নাবালক ছেলেমেয়েরা ইহরাম অবস্থায় কোনো নিষিদ্ধ কাজ করলে তার কাফ্ফারা
দিতে হবে না। শিশুদের হজের কোনো ফরজ ছুটে গেলে বা বাকি থাকলে এই হজ কাজা
করতে হবে না। শিশুকালে হজ করলে বড় হওয়ার পর যদি হজ ফরজ হয়, তবে পুনরায় হজ
আদায় করতে হবে।
হিজড়াদের হজ ও ইবাদত
মহান আল্লাহর সৃষ্টির সেরা হলো মানুষ। মানুষকে আল্লাহ
সৃষ্টি করেছেন নারী ও পুরুষরূপে। মানব সৃষ্টির এই রহস্য সম্পর্কে মহাগ্রন্থ
আল-কোরআনে বলা হয়েছে: হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি
তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক সত্তা (আদম) থেকে; আর তা থেকে তৈরি করলেন তাঁর
জোড়া (হাওয়া) এবং এতদ্বয় থেকে বিস্তৃত করলেন বহু পুরুষ ও নারী। (সুরা নিসা,
আয়াত: ১)। পবিত্র তিনি, যিনি সৃজন করেছেন সবকিছু জোড়ায় জোড়ায়, যা ভূমিতে
উৎপন্ন হয় এবং তোমাদের নিজেদের মাঝেও, আর তাতেও যা তোমরা জানো না। (সুরা
ইয়াসিন, আয়াত: ৩৬)। আর যিনি বানিয়েছেন সবকিছু জোড়ায় জোড়ায়। (সুরা জুখরুফ,
আয়াত: ১২)। আর নিশ্চয় তিনি সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও নারী। (সুরা
নজম, আয়াত: ৪৫)। হে মানবজাতি! নিশ্চয় আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও
একজন নারী থেকে। (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩)। আর আমি বানিয়েছি তোমাদের জোড়ায়
জোড়ায় (পুরুষ ও নারী)। (সুরা নাবা, আয়াত: ৮)। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন জোড়ায়
জোড়ায় পুরুষ ও নারী। (সুরা নজম, আয়াত: ৪৫)। অতঃপর তিনি করলেন তা হতে জোড়ায়
জোড়ায় পুরুষ ও নারী। (সুরা কিয়ামাহ, আয়াত: ৩৯)। আর যা তিনি সৃষ্টি করেছেন
পুরুষ ও নারী। (সুরা লাইল, আয়াত: ৩)। আসমান ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহর জন্যই,
তিনি যা ইচ্ছা সৃজন করেন; যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা
পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা পুরুষ ও নারীতে দম্পতি তৈরি করেন আর যাকে ইচ্ছা
নিঃসন্তান রাখেন; নিশ্চয় তিনি মহাজ্ঞানী ক্ষমতাবান। (সুরা শুরা, আয়াত:
৪৯-৫০)।
হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা
এদের হিজড়া বোলো না; এরা নারী বা পুরুষ। ফকিহগণ হিজড়াকে দুই ভাগে বিভাজিত
করেছেন; যথা: নারী হিজড়া ও পুরুষ হিজড়া। অর্থাৎ পুরুষ হিজড়া হলো অপূর্ণ
পুরুষ আর নারী হিজড়া হলো অপূর্ণ নারী। ইমান, ইসলাম, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত
এমনকি বিয়েসহ সব ইসলামি বিধিবিধান তাদের ওপর (নারী বা পুরুষ হিসেবেই)
বর্তাবে।
হিজড়া হলো মনোদৈহিক বৈকল্য বা শারীরবৃত্তীয় ও মনোজাগতিক
বিকাশের অপূর্ণতা। এটি হরমোনঘটিত একটি সমস্যা। শরীরের যে হরমোনের কারণে
একজন মানুষ পুরুষ বা নারী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়, সেই হরমোন পর্যাপ্ত
পরিমাণে না থাকাই এর প্রধান কারণ। সুতরাং অত্যাধুনিক হরমোন চিকিৎসার
মাধ্যমে এবং ক্ষেত্রবিশেষে শল্যচিকিত্সার মাধ্যমে এর পুরোপুরি স্থায়ী
সমাধান সম্ভব। (রদ্দদুল মুহতার দুররুল মুখতার, ইবনু আবিদীন শামী; মানারুছ
ছাবীল, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা: ৯১)।
নারী হিজড়ারা সাধারণ নারীদের মতো এবং পুরুষ হিজড়ারা সাধারণ
পুরুষের মতো হজব্রত পালন করতে পারবেন। হজ আদায়কালে ছেলে হিজড়াদের পুরুষদের
মতো ইহরাম পরতে হবে এবং মেয়ে হিজড়া নারীদের মতো পোশাকেই ইহরামের নিয়ত
করবেন। (আশ শারহুল মুমাত্তি, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ১৪০; শারহুল মুনতাহা, খণ্ড:
১, পৃষ্ঠা: ১৫০; আল ইখতিয়ার, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৯; আল মুগনি, খণ্ড: ৭,
পৃষ্ঠা: ৬১৯; ফিকাহ বিশ্বকোষ, খণ্ড: ৬, পৃষ্ঠা: ২০৪)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।smusmangonee@gmail.com
https://web.facebook.com/yousuf7181/
No comments:
Post a Comment