হজ ও ওমরাহ পরিচিতি ও বিধান
০০:৫৬, আগস্ট ০৫, ২০১৬
| প্রিন্ট সংস্করণ
|
আপডেট:
হজ
হজ আরবি শব্দ। হজের আভিধানিক অর্থ হলো ইচ্ছা করা এবং সফর বা ভ্রমণ করা। ইসলামি পরিভাষায় হজ হলো নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত স্থানে বিশেষ কিছু কর্ম সম্পাদন করা। হজের নির্দিষ্ট সময় হলো আশহুরে হুরুম বা হারাম মাসসমূহ তথা শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ; বিশেষত ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ দিন। হজের নির্ধারিত স্থান হলো মক্কা শরিফে কাবা, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফা, মুজদালিফা ইত্যাদি এবং মদিনা শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা। হজের বিশেষ আমল বা কর্মকাল হলো ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, অকুফে আরাফাহ, অকুফে মুজদালিফা, অকুফে মিনা, দম, কোরবানি, হলক, কছর, জিয়ারতে মদিনা—রওজাতুল রাসুল ইত্যাদি।
পবিত্র হজ আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ বিধান। হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সমর্থ পুরুষ ও নারীর ওপর হজ ফরজ। হজ সম্পর্কে কোরআন শরিফে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেই সব মানুষের জন্য হজ ফরজ করে দেওয়া হয়েছে, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে।’ (সুরা আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রকৃত হজের পুরস্কার বেহেশত ব্যতীত অন্য কিছুই হতে পারে না। সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যাঁরা হজ পালন করবেন, আল্লাহ তাআলা তাঁদের হজ কবুল করবেন এবং তাঁদের জন্য অফুরন্ত রহমত ও বরকত অবধারিত।
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হজ মানুষকে নিষ্পাপে পরিণত করে, যেভাবে লোহার ওপর থেকে মরিচা দূর করা হয়।’ (তিরমিজি)। যে ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে অথচ তিনি হজ আদায় করেন না, তাঁর জন্য রয়েছে বিশেষ সাবধান বাণী। হজ মানুষকে নিষ্পাপ করে দেয়। রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যথাযথভাবে হজ পালন করে, সে পূর্বেকার পাপ থেকে এ রকম নিষ্পাপ হয়ে যায়, যে রকম সে মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন নিষ্পাপ ছিল।’ (বুখারি)।
জীবনে একবার হজ করা ফরজ। সামর্থ্যবানদের জন্য প্রতি পাঁচ বছর অন্তর হজ করা সুন্নত। সুযোগ থাকলে বারবার বা প্রতিবছর হজ করাতে বাধা নেই। যেকোনো অর্থ দ্বারা হজ সম্পাদন করা যাবে। হাদিয়া বা অনুদানের টাকা দিয়েও হজ করলে তা আদায় হবে। চাকরি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল হিসেবে কর্তব্য কাজের সুবাদে হজ করলেও হজ আদায় হবে। এটি বদলি হজ না হলে নিজের ফরজ হজ আদায় হবে; ফরজ হজ আগে আদায় করে থাকলে এটি নফল হবে। নফল হজ অন্য কোনো ব্যক্তির বদলি হজের নিয়তে আদায় করলে তা–ও হবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি)।
বদলি হজ
হজ সম্পাদনে নিজে শারীরিকভাবে অক্ষম হলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো যায়। বদলি হজে যিনি হজ সম্পাদন করেন, যিনি অর্থায়ন করেন এবং যাঁর জন্য হজ করা হয়—সবাই পূর্ণ হজের সওয়াব লাভ করেন। যাঁরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ আদায় করতে পারেননি, তাঁদের কর্তব্য হলো বদলি হজ করানোর জন্য অসিয়ত করে যাওয়া। অসিয়তকৃত বদলি হজ অসিয়তকারীর সম্পদ বণ্টনের আগে প্রতিপালন করা বা সম্পাদন করানো ওয়ারিশদের জন্য ওয়াজিব। অসিয়ত না করে গেলেও কোনো ওয়ারিশ বা কেউ নিজ উদ্যোগে বা ব্যক্তিগতভাবে তা আদায় করতে বা করাতে পারবেন। এতেও মৃত ব্যক্তি দায়মুক্ত হবেন এবং বদলি হজ করনেওয়ালা ও করানেওয়ালা উভয়ে সওয়াবের অধিকারী হবেন।
জীবিত বা মৃত যেকোনো ব্যক্তিরও বদলি হজ করানো যায়। আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধব অথবা পরিচিত-অপরিচিত যে কেউ যেকোনো ব্যক্তির বদলি হজ করতে বা করাতে পারেন। বদলি হজ আদায় করতে বা করাতে যাঁর জন্য বদলি হজ করা হবে বা করানো হবে, তাঁর অনুমতি বা অবগতির প্রয়োজন নেই; তবে সম্ভবপর হলে তা উত্তম। বদলি হজ সম্পাদনের জন্য আগে নিজের হজ আদায় করা শর্ত নয়; বরং নতুনদের দ্বারা বদলি হজ করালে তাঁর নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, আবেগ ও অনুরাগ বেশি থাকে। তবে যাঁর নিজের হজ অনাদায়ি রয়েছে, তিনি বদলি হজ করতে পারবেন না। বদলি হজ আত্মীয়-অনাত্মীয়, নারী-পুরুষ যে কেউ করতে পারেন। তবে বিজ্ঞ পরহেজগার লোক হলে উত্তম।
ওমরাহ
ওমরাহ আরবি শব্দ। ওমরাহর আভিধানিক অর্থ হলো ধর্ম, কর্ম, ইবাদত, সুখকর, সেবা, স্থিতিশীল, জীবন, মহাপ্রাচীন, স্থাপত্য-স্থাপনা, প্রাপ্তি, অভ্যর্থনা, জিয়ারত বা সফর ও ইচ্ছা। যিনি ওমরাহ করেন, তাঁকে ‘মুতামির’ বলা হয়। (লিসানুল আরব)। ইসলামি পরিভাষায় ওমরাহ হলো নির্ধারিত স্থানে নির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদন করা। ওমরাহর নির্দিষ্ট কাজকর্ম হলো ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, হলক, কছর ইত্যাদি। ওমরাহর নির্ধারিত স্থান হলো কাবা শরিফ, সাফা-মারওয়া ইত্যাদি। আফাকি তথা দূরবর্তী ওমরাহ সম্পাদনকারীর জন্য মদিনা মুনাওয়ারায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নত। ওমরাহ সম্পাদনের বিশেষ কোনো সময় সুনির্দিষ্ট নেই; তবে হজের নির্ধারিত বিশেষ সময়ে (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ দিন) ওমরাহ পালন করা বিধেয় নয়; এই পাঁচ দিন ছাড়া বছরের যেকোনো দিন যেকোনো সময় ওমরাহ প্রতিপালন করা যায়। হজের সফরেও ওমরাহ করা যায়। একই সফরে একাধিক ওমরাহ করতেও বাধা নেই। হজের আগেও (হজ না করেও) ওমরাহ করা যায় এবং হজের পরও বারবার ওমরাহ করা যায়। হজ যেমন জীবনে একবার ফরজ, তেমনি ওমরাহ জীবনে অন্তত একবার সুন্নত।
রমজানে ওমরাহ পালন করা হজের সমান সওয়াব; শাওয়াল মাসও ওমরাহ করার জন্য উত্তম সময়। তবে হজ ফরজ থাকা অবস্থায় তা আদায়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হজ সম্পন্ন না করে বারবার ওমরাহ করা অযৌক্তিক। কারণ, শত-সহস্র ওমরাহও হজের সমকক্ষ হবে না। অনুরূপভাবে ওমরাহ আদায় করলে হজ ফরজ হয়ে যায়, এমনটিও সঠিক নয়।
ওমরাহর জন্যও হজের মতোই মিকাত থেকে ইহরাম করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে আমাদের মিকাত হলো ইয়ালামলাম পাহাড়, যা জেদ্দার পূর্বে অবস্থিত। মদিনা থেকে মিকাত হলো জুলহুলায়ফা নামক স্থান। মক্কা থেকে ওমরাহ করতে চাইলে তার মিকাত হলো তানয়িম বা আয়িশা মসজিদ অথবা জিরানা নামক জায়গা। (মক্কা থেকে হজের ইহরামের জন্য মিকাত প্রযোজ্য নয়)। ওমরাহকে ‘ওমরাহ হজ’ বা ছোট হজও বলা হয়।
ওমরাহ সম্পর্কে কোরআন করিমে রয়েছে: ‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনাবলির অন্যতম; তাই যারা হজ করবে বা ওমরাহ করবে, তারা এতদুভয়ের প্রদক্ষিণ (সায়ী) করবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৮)। ওমরাহ পালন করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল। এটি পুরুষ ও মহিলা সবার জন্য প্রযোজ্য। ওমরাহ করলে হজ ফরজ হয়ে যায়, এ রকম কোনো বিধান নেই। মক্কা-মদিনার প্রতি আকর্ষণ ও হৃদয়ের টান ইমানের পরিচায়ক। তাই অনেকে প্রেমের টানে বারবার হজ ও ওমরাহ করে থাকেন।
ওমরাহ নিজের জন্য যেমন করা যায়, তেমনি অন্যদের জন্যও করা যায়। জীবিত বা মৃত, ছোট বা বড়, আত্মীয় বা অনাত্মীয় যেকোনো ব্যক্তির জন্যও ওমরাহ আদায় করা যায়। যার জন্য ওমরাহ পালন করা হবে, তাকে আগে বা পরে জানানো বা অনুমতি নেওয়া শর্ত নয়; তবে তা জানানো উত্তম। ওমরাহ যেহেতু ফরজ বা ওয়াজিব নয়, তাই এর বদলি আদায় করা জরুরি নয়। তবে কাউকে যদি কোনো সামর্থ্যবান ব্যক্তি অসিয়ত করে যান, তা আদায় করা ওয়াজিব হবে। এ ছাড়া কেউ কারও দ্বারা ওমরাহ করালে উভয়ে সমান সওয়াব পাবেন; কেউ কারও জন্য ওমরাহ সম্পাদন করলেও উভয়েই পূর্ণ সওয়াবের অধিকারী হবেন। (ফাতাওয়া শামি)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com
https://web.facebook.com/yousuf7181/
হজ আরবি শব্দ। হজের আভিধানিক অর্থ হলো ইচ্ছা করা এবং সফর বা ভ্রমণ করা। ইসলামি পরিভাষায় হজ হলো নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত স্থানে বিশেষ কিছু কর্ম সম্পাদন করা। হজের নির্দিষ্ট সময় হলো আশহুরে হুরুম বা হারাম মাসসমূহ তথা শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ; বিশেষত ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ দিন। হজের নির্ধারিত স্থান হলো মক্কা শরিফে কাবা, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফা, মুজদালিফা ইত্যাদি এবং মদিনা শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা। হজের বিশেষ আমল বা কর্মকাল হলো ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, অকুফে আরাফাহ, অকুফে মুজদালিফা, অকুফে মিনা, দম, কোরবানি, হলক, কছর, জিয়ারতে মদিনা—রওজাতুল রাসুল ইত্যাদি।
পবিত্র হজ আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ বিধান। হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সমর্থ পুরুষ ও নারীর ওপর হজ ফরজ। হজ সম্পর্কে কোরআন শরিফে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেই সব মানুষের জন্য হজ ফরজ করে দেওয়া হয়েছে, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে।’ (সুরা আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রকৃত হজের পুরস্কার বেহেশত ব্যতীত অন্য কিছুই হতে পারে না। সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যাঁরা হজ পালন করবেন, আল্লাহ তাআলা তাঁদের হজ কবুল করবেন এবং তাঁদের জন্য অফুরন্ত রহমত ও বরকত অবধারিত।
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হজ মানুষকে নিষ্পাপে পরিণত করে, যেভাবে লোহার ওপর থেকে মরিচা দূর করা হয়।’ (তিরমিজি)। যে ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে অথচ তিনি হজ আদায় করেন না, তাঁর জন্য রয়েছে বিশেষ সাবধান বাণী। হজ মানুষকে নিষ্পাপ করে দেয়। রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যথাযথভাবে হজ পালন করে, সে পূর্বেকার পাপ থেকে এ রকম নিষ্পাপ হয়ে যায়, যে রকম সে মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন নিষ্পাপ ছিল।’ (বুখারি)।
জীবনে একবার হজ করা ফরজ। সামর্থ্যবানদের জন্য প্রতি পাঁচ বছর অন্তর হজ করা সুন্নত। সুযোগ থাকলে বারবার বা প্রতিবছর হজ করাতে বাধা নেই। যেকোনো অর্থ দ্বারা হজ সম্পাদন করা যাবে। হাদিয়া বা অনুদানের টাকা দিয়েও হজ করলে তা আদায় হবে। চাকরি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল হিসেবে কর্তব্য কাজের সুবাদে হজ করলেও হজ আদায় হবে। এটি বদলি হজ না হলে নিজের ফরজ হজ আদায় হবে; ফরজ হজ আগে আদায় করে থাকলে এটি নফল হবে। নফল হজ অন্য কোনো ব্যক্তির বদলি হজের নিয়তে আদায় করলে তা–ও হবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি)।
বদলি হজ
হজ সম্পাদনে নিজে শারীরিকভাবে অক্ষম হলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো যায়। বদলি হজে যিনি হজ সম্পাদন করেন, যিনি অর্থায়ন করেন এবং যাঁর জন্য হজ করা হয়—সবাই পূর্ণ হজের সওয়াব লাভ করেন। যাঁরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ আদায় করতে পারেননি, তাঁদের কর্তব্য হলো বদলি হজ করানোর জন্য অসিয়ত করে যাওয়া। অসিয়তকৃত বদলি হজ অসিয়তকারীর সম্পদ বণ্টনের আগে প্রতিপালন করা বা সম্পাদন করানো ওয়ারিশদের জন্য ওয়াজিব। অসিয়ত না করে গেলেও কোনো ওয়ারিশ বা কেউ নিজ উদ্যোগে বা ব্যক্তিগতভাবে তা আদায় করতে বা করাতে পারবেন। এতেও মৃত ব্যক্তি দায়মুক্ত হবেন এবং বদলি হজ করনেওয়ালা ও করানেওয়ালা উভয়ে সওয়াবের অধিকারী হবেন।
জীবিত বা মৃত যেকোনো ব্যক্তিরও বদলি হজ করানো যায়। আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধব অথবা পরিচিত-অপরিচিত যে কেউ যেকোনো ব্যক্তির বদলি হজ করতে বা করাতে পারেন। বদলি হজ আদায় করতে বা করাতে যাঁর জন্য বদলি হজ করা হবে বা করানো হবে, তাঁর অনুমতি বা অবগতির প্রয়োজন নেই; তবে সম্ভবপর হলে তা উত্তম। বদলি হজ সম্পাদনের জন্য আগে নিজের হজ আদায় করা শর্ত নয়; বরং নতুনদের দ্বারা বদলি হজ করালে তাঁর নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, আবেগ ও অনুরাগ বেশি থাকে। তবে যাঁর নিজের হজ অনাদায়ি রয়েছে, তিনি বদলি হজ করতে পারবেন না। বদলি হজ আত্মীয়-অনাত্মীয়, নারী-পুরুষ যে কেউ করতে পারেন। তবে বিজ্ঞ পরহেজগার লোক হলে উত্তম।
ওমরাহ
ওমরাহ আরবি শব্দ। ওমরাহর আভিধানিক অর্থ হলো ধর্ম, কর্ম, ইবাদত, সুখকর, সেবা, স্থিতিশীল, জীবন, মহাপ্রাচীন, স্থাপত্য-স্থাপনা, প্রাপ্তি, অভ্যর্থনা, জিয়ারত বা সফর ও ইচ্ছা। যিনি ওমরাহ করেন, তাঁকে ‘মুতামির’ বলা হয়। (লিসানুল আরব)। ইসলামি পরিভাষায় ওমরাহ হলো নির্ধারিত স্থানে নির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদন করা। ওমরাহর নির্দিষ্ট কাজকর্ম হলো ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, হলক, কছর ইত্যাদি। ওমরাহর নির্ধারিত স্থান হলো কাবা শরিফ, সাফা-মারওয়া ইত্যাদি। আফাকি তথা দূরবর্তী ওমরাহ সম্পাদনকারীর জন্য মদিনা মুনাওয়ারায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নত। ওমরাহ সম্পাদনের বিশেষ কোনো সময় সুনির্দিষ্ট নেই; তবে হজের নির্ধারিত বিশেষ সময়ে (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ দিন) ওমরাহ পালন করা বিধেয় নয়; এই পাঁচ দিন ছাড়া বছরের যেকোনো দিন যেকোনো সময় ওমরাহ প্রতিপালন করা যায়। হজের সফরেও ওমরাহ করা যায়। একই সফরে একাধিক ওমরাহ করতেও বাধা নেই। হজের আগেও (হজ না করেও) ওমরাহ করা যায় এবং হজের পরও বারবার ওমরাহ করা যায়। হজ যেমন জীবনে একবার ফরজ, তেমনি ওমরাহ জীবনে অন্তত একবার সুন্নত।
রমজানে ওমরাহ পালন করা হজের সমান সওয়াব; শাওয়াল মাসও ওমরাহ করার জন্য উত্তম সময়। তবে হজ ফরজ থাকা অবস্থায় তা আদায়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হজ সম্পন্ন না করে বারবার ওমরাহ করা অযৌক্তিক। কারণ, শত-সহস্র ওমরাহও হজের সমকক্ষ হবে না। অনুরূপভাবে ওমরাহ আদায় করলে হজ ফরজ হয়ে যায়, এমনটিও সঠিক নয়।
ওমরাহর জন্যও হজের মতোই মিকাত থেকে ইহরাম করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে আমাদের মিকাত হলো ইয়ালামলাম পাহাড়, যা জেদ্দার পূর্বে অবস্থিত। মদিনা থেকে মিকাত হলো জুলহুলায়ফা নামক স্থান। মক্কা থেকে ওমরাহ করতে চাইলে তার মিকাত হলো তানয়িম বা আয়িশা মসজিদ অথবা জিরানা নামক জায়গা। (মক্কা থেকে হজের ইহরামের জন্য মিকাত প্রযোজ্য নয়)। ওমরাহকে ‘ওমরাহ হজ’ বা ছোট হজও বলা হয়।
ওমরাহ সম্পর্কে কোরআন করিমে রয়েছে: ‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনাবলির অন্যতম; তাই যারা হজ করবে বা ওমরাহ করবে, তারা এতদুভয়ের প্রদক্ষিণ (সায়ী) করবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৮)। ওমরাহ পালন করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল। এটি পুরুষ ও মহিলা সবার জন্য প্রযোজ্য। ওমরাহ করলে হজ ফরজ হয়ে যায়, এ রকম কোনো বিধান নেই। মক্কা-মদিনার প্রতি আকর্ষণ ও হৃদয়ের টান ইমানের পরিচায়ক। তাই অনেকে প্রেমের টানে বারবার হজ ও ওমরাহ করে থাকেন।
ওমরাহ নিজের জন্য যেমন করা যায়, তেমনি অন্যদের জন্যও করা যায়। জীবিত বা মৃত, ছোট বা বড়, আত্মীয় বা অনাত্মীয় যেকোনো ব্যক্তির জন্যও ওমরাহ আদায় করা যায়। যার জন্য ওমরাহ পালন করা হবে, তাকে আগে বা পরে জানানো বা অনুমতি নেওয়া শর্ত নয়; তবে তা জানানো উত্তম। ওমরাহ যেহেতু ফরজ বা ওয়াজিব নয়, তাই এর বদলি আদায় করা জরুরি নয়। তবে কাউকে যদি কোনো সামর্থ্যবান ব্যক্তি অসিয়ত করে যান, তা আদায় করা ওয়াজিব হবে। এ ছাড়া কেউ কারও দ্বারা ওমরাহ করালে উভয়ে সমান সওয়াব পাবেন; কেউ কারও জন্য ওমরাহ সম্পাদন করলেও উভয়েই পূর্ণ সওয়াবের অধিকারী হবেন। (ফাতাওয়া শামি)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com
https://web.facebook.com/yousuf7181/
No comments:
Post a Comment